শুভজিৎ দাস, আগরতলা, ১৬ আগস্ট || প্রিয় ভারত,
শুভ স্বাধীনতা দিবস সকল ভারতবাসীর পক্ষ থেকে। ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট তুমি ব্রিটিশ শাসনের হাত থেকে মুক্ত হয়েছিলে। সেদিন তোমাকে ভাগ করা হলো এবং তোমার সার্বভৌমত্বের এক্তিয়ার স্কুল, জল আর আকাশভূমিতে অদৃশ্য গণ্ডিত্ত আঁকা হলো। বলা হলো তোমার সার্বভৌমন্ত্রের এক্তিয়ারের মাঝে বসবাসকারী সকলে হবে ভারতবাসী। লেখা হলো সংবিধান, যা তোমার সার্বভৌমর এবং তোমার এক্তিয়ারের মধ্যে বসবাসকারী সকলের অধিকার সুরক্ষিত করবে। সেই ১৯৪৭ সালের ১৫ই অগাস্ট থেকে প্রতি বছর এই দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করে আসছি।
২০২২ সালে প্রথমবারের মতো স্বাধীনতা দিবসের পালনে কিছু পরিবর্তন আসে। সরকার পক্ষ থেকে একটি নতুন কর্মসূচী গ্রহণ করা হয় “हर घर নিरंगा।” এই সিদ্ধান্ত তোমায় যথেষ্ট সন্তোষ দিয়েছে, কারণ তোমার আনন্দে তোমার এক্তিয়ারের মাঝে থাকা সকল ভারতবাসী একত্রিত হতে পারবে।
কিকু তোমার কাছে কি শুধু হিন্দি ভাষা প্রাধান্য পাবে? আমরা অন্যরা কি তোমার প্রাধান্য তালিকায় স্থান পাবো না? যদি না পাই, তবে কেন তা আমি জানতে পারি তোমার কাছে? এই স্লোগানটি বিভিন্ন ভাষায় রূপান্তরিত হতে পারত, যা তোমার বৈচিত্র্যকেই প্রতিফলিত করতো। “প্রতি ঘরে পতাকা’ ও ভো হতে পারতো ‘প্রতিটো ঘষতে ত্রিবংগ (অহমীয়া), ভো হতে পারতো,” प्रत्येक घरात तिरंगा’ (मानাঠি) কি হতে পারতো না? “৪২৪ ६२५। সি২১১৯” (গুজরাতি) ও তো হতে পারতো, “জতনি নগ পতাকা’ (ককবরক) হলেও বিচিত্র কিছু হতো না। পিপলস নিঙ্গুইস্টিক সার্ভে অফ ইন্ডিয়া অনুসারে, তোমার স্বতন্ত্র সীমারেখার মাঝে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ভাষা রয়েছে যার সংখ্যা ৭৮০ টি, যার মাঝে ২২টি সরকারী ভাষা রয়েছে এবং সেগুলি ভারতীয় সংবিধানের ৮ম তফসিলের আওতায় এনে সংরক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
তবে তোমার সাখে আমার কথাটা এখানেই শেষ হচ্ছে না, আশা করি তুমি তোমার স্বতন্ত্র সীমারেখার সম্পর্কে অবগত থাকবে: উত্তরে জম্মু কাশ্মীর,
যে দক্ষিণে কন্যাকুমারি, পর্বে অরুনাচল প্রদেশ আর পশ্চিমে গুজরাট। তবে এখন প্রশ্নটা হল যে আমরা যারা তোমার স্বতন্ত সীমারেখার মাঝে বাস করছি অব্দি আমরা সাধারণ পানীয় জলের ব্যবস্থা করতে পারিনি, স্থাপন করতে পারিনি বিদ্যুৎ সংযোগ। ওই সব প্রত্যন্ত এলাকায় “हर घर तिरंगा’ নামের স্বার্থকতা কিভাবে সফল হবে? এখানে ভাষা কি প্রতিবন্ধকতার কাজ করবে না?
যেমন আমরা তোমার স্বতন্ত্র সীমারেখার ভেতর একটি ছোট রাজ্য ত্রিপুরায় জীবন যাপন করছি। বলতে গেলে আমাদের ত্রিপুরার দুটি সরকারি ভাষা আছে- বাংলা আর ককবরক। এখন কথা হচ্ছে যে সকল ত্রিপুরাবাসী তো আর হিন্দি বুঝতে সক্ষম নয় এবং এটাই বাস্তব। আর আমরা ত্রিপুরাবাসী যারা অল্প বিস্তর হিন্দি বুঝতে বা বলতে সক্ষম, তারা সবাই कि हर घर तिरंगা” নামের সাথে নিজেদের অনুভূতির মিল করাতে পেরেছি?
‘প্রতিঘর পতাকা’ (বাংলা) বা ‘জতনি নগ পতাকা’ (ককবরক) হলে হয়তো “हर घर तिरंगा” এর স্বার্থকতা ফুটে উঠতো বলে আমাদের মনে হয়, আশা করি তুমিও এর বিপক্ষে থাকবে না। এখন আমরা ত্রিপুরাবাসী না হয়ে যদি গুজরাট রাজ্যের বাসিন্দা হতাম তবে হয়তো “৪২৪ ६२५ त्रिरंगो” অথবা আসাম রাজ্যের বাসিন্দা হতাম তবে “প্ৰতিটো ঘৰতে ত্ৰিৰংগ” কিংবা যদি মারাঠি হতাম তবে प्रत्येक घरात तिरंगा” এর সাথে নিজেদের আরো অনেক বেশি ভাবে ‘हर घर तिरंगा” এর সাথে যুক্ত করতে পারতাম বলে আমাদের মনে হয়।
ইতি, তোমার স্বাধীন ভূমির মাঝে থাকা ভারতবাসী সকল।