মেলারমাঠস্থিত CPI(M) কার্যালয়ে দলের রাজ্য সম্পাদক বিজন ধর কথা বলেছেন“নিউজ আপডেট অব ত্রিপুরা ডট কম”-র সঙ্গে। প্রাসঙ্গিক প্রেক্ষাপট হিসেবে ADC ভোট থাকলেও CPI(M) রাজ্য সম্পাদক অভিমত ব্যক্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দৃষ্টিকোন থেকে প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে এডিসি ভোটে মানুষের রায়, ভোট হ্রাসের কারন, রাজ্য তথা দেশের রাজনীতিতে বামশক্তিকে দূর্বল করার প্রয়াস, জাতীয় তথা রাজ্যস্তরে কংগ্রেসের অবস্থান, পরিবর্তন ও পশ্চিমবঙ্গ, রাজ্যে বিভাজনের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা দখলের প্রয়াস ও মানুষের ভূমিকা সর্বোপরি সব বাধা দূর করার ক্ষেত্রে সংগ্রাম, লড়াই হচ্ছে একমাত্র পথ বলে জানিয়েছেন নাতিদীর্ঘ সাক্ষাৎকার পর্বে।
প্রশ্নঃ- এতদিন আপনারা ক্ষমতায় – সংগঠনের শেকড় রয়েছে রাজ্যের সর্বত্র, প্রতিনিয়ত মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ, লড়াই সংগ্রাম চলছে নিরন্তর – তারপরেও ADC ভোটের ফলাফল যে ইঙ্গিত দিয়েছে তাতে কি ভাবছেন?
উত্তরে বিজন ধরঃ- আমাদের ভোট কমেছে অস্বীকার করছি না। তবে তার পেছনে যে সামগ্রিক পরিবেশ তৈরী করা হয়েছিল সেখানে শুধু মিথ্যার অবতারনা, কুৎসা, জাত্যাভিমানের সুড়সুড়ি, বিভেদের রাজনীতির মধ্য দিয়ে ঐক্য, সম্পীতি নষ্টের চেষ্টা করা হয়েছে ক্রমাগত। তার মধ্যেও গনতন্ত্র প্রিয় মানুষ শান্তি উন্নয়নের পক্ষে রায় দিয়েছেন এটা বিশ্বাস আর আস্থার ফসল।
প্রশ্নঃ- আপনার কি মনে হয় ভোটের প্রচারে মানুষ বিভ্রান্ত হয়েছেন?
উত্তরে বিজন ধরঃ- একটা ভিন্ন রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির মধ্যে ADC ভোট সম্পন্ন হয়েছে। একদিকে উপজাতি বাঙালীর মধ্যে অনৈক্যের বীজ রপনের চেষ্টা, শুধুমাত্র এক অংশের মানুষের জন্য ক্ষমতা দখলের মরিয়া প্রয়াস, বিজেপি’র মতো দলের ধর্মীয় ভাবাবেগ নিয়ে প্রচার – অন্যদিকে বামফ্রন্টের শান্তি আর উন্নয়নের প্রচার। কিছু ক্ষেত্রে বিভ্রান্ত হয়েছে মানুষ। এডিসি’র ভোট গননায় কোথাও IPFT কিংবা বিজেপি বিভ্রান্তির ভোট কুড়িয়েছে।
প্রশ্নঃ- এই প্রবনতা কি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে পরিবর্তনের কোন ইঙ্গিত ?
উত্তরে বিজন ধরঃ- পরিবর্তন হচ্ছে গনতন্ত্রের বিশাল ও ব্যপক অধ্যায়। তবে পরিবর্তনের কথায় পশ্চিমবঙ্গে এ মুহূর্তে যে আধাফ্যাসিষ্ট অবস্থা তা কোন সময়ই কাম্য নয়। গনতন্ত্রে পরিবর্তন প্রক্রিয়া আবশ্যিক বিষয়। ক্ষমতা কুক্ষিগত নয় ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরনে বিশ্বাসী আমরা।
প্রশ্নঃ- ত্রিপুরায় গনতন্ত্র বিপন্ন বলে অনেকে অভিমত ব্যক্ত করে থাকেন –
উত্তরে বিজন ধরঃ- এই রাজ্যে গনতন্ত্র নেই যারা বলে তাদের জন্য এডিসি নির্বাচনই প্রমান। ভোটের আগে সব দল ভোট প্রচার করেছে, নিজস্ব মতামত তুলে ধরেছে অবাধ ভাবে মানুষের সামনে, উৎসবের মেজাজে ভোট হয়েছে – মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার সুরক্ষায় রাজ্য সরকার প্রতিমুহূর্তে সজাগ সতর্ক রয়েছে। ভোট পরবর্তী অবস্থায় হানাহানি বন্ধে রাজনৈতিক সহিষ্ণুতার প্রয়োজন সব পক্ষেরই।
প্রশ্নঃ- ADC ভোটে কংগ্রেসের হাল নিয়ে কি অভিমত?
উত্তরে বিজন ধরঃ- কংগ্রেস বড় দল জাতীয় স্তরে, আশা করি দূর্দশা কাটিয়ে উঠবে। তবে রাজ্য কংগ্রেস কোনো দিনই উপজাতীদের স্বার্থ দেখেনি। একচেটিয়ে পুঁজিপতি শ্রেনীর তাবেদার হচ্ছে কংগ্রেস।
প্রশ্নঃ- ADC ভোটে IPFT –র ধূমকেতুর মতো উঠে আসা ভোট প্রাপ্তিকে কি ভাবে বিচার করবেন?
উত্তরে বিজন ধরঃ- IPFT মোটেও ধূমকেতুর মতো উঠে আসেনি। পেছনের ইতিহাস থেকে ধাপে ধাপে বিচার করে দেখা যাচ্ছে সময়ে সময়ে মুখোশ বদল করে রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন থেকে যুব সমিতি – কংগ্রেস – রাজীবগান্ধী একই সূত্রে গাঁথা। মানুষ হত্যা, লুন্ঠন, গৃহদাহ, রক্তের মধ্য দিয়েও ক্ষমতা দখল হয়েছিল এই রাজ্যে – মানুষ ভুলে যায়নি। তার শ্রোত এখনও বইছে – রাজ্যের মানুষকে সদাসতর্ক সজাগ থাকতে হবে বহমান বিভেদের রাজনীতি সম্পর্কে।
প্রশ্নঃ- আগামী দিনের রাজ্য রাজনীতি কি অন্য খাতে বইতে যাচ্ছে?
উত্তরে বিজন ধরঃ- এডিসি’র ভোট দিয়েই আগামী দিনের রাজনীতির চিত্রকল্প নির্ধারিত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। ডিভাইসিভ ফোর্স, মনমোহিনী আকর্ষক প্রচার করে শুধু ক্ষমতা দখলের রাজনীতি যারা করেন তাদের উপজাতিদের স্বার্থ, জীবন সংগ্রাম, চাকুরী, অন্যের সংস্থান, জীবনের মৌলিক চাহিদা নিয়ে ভাবনা কি – জানতে চায় মানুষ। সাময়িক কালের জন্য মানুষ বিভ্রান্ত হলেও আস্তে আস্তে জীবনের অংকেই আবার হিসেব করবেন কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছুনোর পথ।
প্রশ্নঃ- ADC ভোটে শতকরা হিসেবে ৮৩ –র ভেতরে ৫৪ পেয়েছেন, সুসংহত প্রচার করেছেন, জনসংযোগে কোথাও কি ত্রুটি ছিল?
উত্তরে বিজন ধরঃ- ADC ভোটে একদিকে উন্নয়নবিরোধী, নাশকতার প্রচার আর একদিকে সার্বিক বিকাশের জন্য বাঙ্গালী উপজাতি ঐক্য সংহতির কথা প্রচার করেছে বামফ্রন্ট। তবে আগামীতে বিভিন্নস্তরে দলের হয়ে যার জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক পদে কাজ করছেন তাদের বেশী বেশী করে খোঁজ রাখতে হবে নিজ নিজ অঞ্চলের। এই ক্ষেত্রে ঘাটতি খামতি থাকলে তার বিশ্লেষন নিশ্চয়ই করা হবে।
প্রশ্নঃ- ADC ভোটের ফলাফল দেশে বাম আন্দোলনে ভিন্ন বার্তা দেবে আপনারাই বলেছিলেন –
উত্তরে বিজন ধরঃ- একটা কথা বলি, দেশের বাইরে থেকে ভেতর থেকে উগ্রজাতীয়তাবাদী দল গুলো ক্রমাগত বাম আন্দোলন আর সংগঠন গুলোকে আক্রমন করে যাচ্ছে। মাথাচারা দিচ্ছে জাতপাত, সাম্প্রদায়িক সুড়সুড়ি দিয়ে রাজনৈতিক লাভালাভের চেষ্টা। এই ক্ষেত্রে এডিসি ভোট শান্তি, সম্প্রতি, আস্থা, বিশ্বাসের ফলে বামফ্রন্টের জয়ে দেশের বাম ও ধর্ম নিরপেক্ষ শক্তির জন্য নতুন বার্তা দেবে – আশা করি।
প্রশ্নঃ- ADC ভোটে কি রুটি, রুজির যোগ ছিল?
উত্তরে বিজন ধরঃ- নিশ্চয়ই – শান্তিতে সহাবস্থান, উন্নয়নের অংশীদার, কাজ করে কামাই তারপর রুটির সংস্থান। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের প্রশ্নে পাহাড় সমতলে সমান অগ্রগতি অব্যাহত। স্বভাবতই রুজি আর রুটির ফারাক দূর করার প্রয়াস হচ্ছে এডিসি ভোটের ফলাফল।
প্রশ্নঃ- সবশেষে বলুন – গনতন্ত্রের সবশেষ রায়কে দল কোন দৃষ্টিকোন থেকে বিচার করছে?
উত্তরে বিজন ধরঃ- আমাদের ভোট কোমায় বিভিন্ন মহল থেকে যে ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে সেই সম্পর্কে বলি উন্নয়ন বিরোধী, ঐক্য সংহতি নাশকারী শক্তির বিরুদ্ধে সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের এই রায় হচ্ছে বামফ্রন্টের প্রতি বিশ্বাসের প্রতীক। আত্মতুষ্টির কোনো অবকাশ নেই, রাজনৈতিক ভাবেই লড়াই সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বিভেদের বিভাজনের পথ রুদ্ধ করে দেয়া হবে। ২৮শে ২৮ প্রমান রাজ্যের মানুষ গনতন্ত্রের প্রতি চির আস্থাশীল।
সাক্ষাৎকার গ্রহনে দেবজিত চক্রবর্তী।