গোপাল সিং, খোয়াই, ১১ সেপ্টেম্বর || সাম্প্রতিক বন্যায় দুর্গত অসহায় মানুষের ক্ষতিপূরণ প্রদান করার দাবীতে বুধবার খোয়াই জেলা সদরে সি পি আই (এম) খোয়াই মহকুমা কমিটির ডাকে মিছিল শেষে খোয়াই জেলা শাসকের নিকট গণ ডেপুটেশন প্রদান করা হয়। সরকারী ক্ষতিপূরণ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনরকম সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনৈতিক দলবাজি কোনভাবেই বরদাস্ত করবে না বিধ্বংসী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। জেলা শাসকের হাতে দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি তুলে দিয়ে এই মর্মে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে এলেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দরা।
সি পি আই (এম) খোয়াই মহকুমা কমিটির ডাকে কবিগুরু পার্কের রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশ থেকে বের হয় মিছিল। মিছিলটি বনকর, নতুন টাউন হল, জননেতা রঞ্জন রায় সেতু, নিবেদিতা পার্ক ও নৃপেন চক্রবর্তী অ্যাভেনিউ পার হয়ে জেলা শহরের মূল প্রাণকেন্দ্র সুভাষপার্ক বাজার ও কোহিনূর শপিং কমপ্লেক্স হয়ে স্বামী বিবেকানন্দ সরণী ঘুরে সি পি আই (এম) এর সুভাষপার্ক অঞ্চল কমিটির কার্য্যালয়ের সামনে এসে জমায়েতে মিলিত হয়। জমায়েতে বক্তব্য রাখেন সিপিআই(এম) খোয়াই জেলা কমিটির সম্পাদক ডঃ রঞ্জিত দেববর্মা। জমায়েত থেকে সি পি আই (এম) খোয়াই মহকুমা সম্পাদক পদ্ম কুমার দেববর্মার নেতৃত্বে পাঁচজনের প্রতিনিধিদল জেলা সদরের মূল প্রশাসনিক কেন্দ্র অফিসটিলায় জেলা প্রশাসনের কার্য্যালয়ে গিয়ে জেলা শাসক চান্দনী চন্দ্রনের সাথে সাক্ষাৎ করে তার হাতে সাত দফা দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করেন। প্রতিনিধিদলে এছাড়াও ছিলেন সি পি আই (এম) রাজ্য কমিটির সদস্য তথা বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস, জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পলাশ ভৌমিক ও মহকুমা কমিটির দুই সদস্য মনোজ দাস ও বিষ্ণুজিত দস্তিদার।
জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে ডঃ রঞ্জিত দেববর্মা বলেন, প্রাকৃতিক বিপর্য্যয়েও ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ দলবাজির নির্মম শিকার। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তরা সরকারী সহায়তা থেকে বঞ্চিত। বিরোধী দলের সমর্থক পরিবারের লোকজন জবকার্ড থাকা সত্বেও রেগা ও টুয়েপের কাজ পায়না। বন্যার সময় ত্রাণ শিবিরেও স্থান পায়না বিরোধী দলের সমর্থক পরিবারের অসহায় মানুষজন। সাম্প্রতিক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনদেরকে দ্রুত সরকারী ক্ষতিপূরণ প্রদান করার দাবী জানাতে এই মিছিল ও গণ ডেপুটেশন বলে জানান তিনি।
এদিকে জেলা শাসকের হাতে দাবী সম্বলিত স্মারকলিপি প্রদান করে সি পি আই (এম)’র নেতবৃন্দও প্রশাসনকে একই হুঁশিয়ারী দেন। তাদের মতে প্রশাসন সব রকমের দলমতের উর্ধে উঠে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের তালিকা তৈরি করুক। শাসকদলের পরিচালিত পঞ্চায়েত বা পুর পরিষদের হাতে সবটা প্রশাসনিক দায়িত্ব তুলে না দিয়ে প্রশাসন তার আধিকারিকদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকায় গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্যাদি সংগ্রহ করে আনুক। প্রশাসন যেন কোনভাবেই শাসকদলের পঞ্চায়েত বা পুর পরিষদের চোখ রাঙানির কাছে মাথা নত না করে। এছাড়া যে সব পরিবারে বাসগৃহ বন্যার কারণে সম্পূর্ণ বা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেসব পরিবারে বাসগৃহ নির্মাণ করা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক, সব্জিচাষী, মৎস্যজীবী, প্রাণীপালক, রাবার চাষীদেরকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ প্রদান করে এদের রুজি রোজগার পুণরায় শুরু করার সুযোগ দেওয়া, ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, সেতু, কালভার্ট, বিদ্যুৎ লাইন, পানীয় জল ও সেচের প্রকল্প সহ ক্ষতিগ্রস্ত সরকারী প্রতিষ্ঠান সমূহ অবিলম্বে সংস্কার করা, বন্যাদুর্গতদের রুজি রোজগারের স্বার্থে রেগা ও টুয়েপের কাজ প্রদান করা ও বন্যা বিধ্বস্ত এলাকায় জনস্বাস্থ্য ও রোগবালাই মোকাবিলায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসা শিবির করার উদ্যোগ নেওয়ার দাবী জানান। এছাড়াও প্রশাসনিক সভা, প্রয়োজনে সর্বদলীয় সভা আহ্বান করে বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি পর্য্যালোচনার পরামর্শও জেলা শাসককে দিয়েছেন সি পি আই ( এম) নেতৃবৃন্দ। জেলা শাসক চান্দনী চন্দ্রন সি পি আই (এম) প্রতিনিধিদলকে এই মর্মে আশ্বস্ত করে বলেন যে, বন্যাদুর্গতদের সরকারী ক্ষতিপূরণ প্রদান করার ক্ষেত্রে কোনরকম দলীয় রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেবে না প্রশাসন। যদি এ ধরনের কোন ঘটনা থাকে তাহলে প্রয়োজনে তা প্রশাসনের নজরে নেওয়ার অনুরোধ জানান।