সাগর দেব, তেলিয়ামুড়া, ২৮ সেপ্টেম্বর || বাঙ্গালি অংশের মানুষজন আধুনিক যুগে চলে এলেও যুগ যুগ ধরেই দেবী দশভূজা’র আরাধনা চলছে নিজস্ব গতিতেই। দেবী দূর্গার আরাধনা মানেই ঢাক। আর ঢাক ছাড়া যেন দুর্গাপূজা ফিকে।
তবে বলতে দ্বিধা নেই এই সময়ের মধ্যে বাকি আর পাঁচটা ক্ষেত্রের মতো দুর্গাপূজার আয়োজন থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধর্মীয় আয়োজনেও ব্যাপকভাবে আধুনিকতার সংযোজন পরিলক্ষিত হচ্ছে। কিন্তু আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে সবকিছু বদলালেও বদলাইনি ঢাকের কদর। একটা সময় দুর্গাপূজার আয়োজন থেকে শুরু করে ধর্মীয় বিভিন্ন আয়োজনে ঢাক ছিল অত্যন্ত আবশ্যক। বর্তমানেও ঠিক তাই। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের সাথে সাথে তেলিয়ামূড়ার একটা বিরাট অংশের মানুষ এই ঢাক বাজিয়ে নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছেন সেই অনাদিকাল থেকেই এবং কালক্রমে এই শিল্পের পরিসর ও অনেকটাই বৃদ্ধি ঘটেছে। সামনেই দুর্গাপূজা, আর সে কারণেই মূলত ঢাকি’র খোঁজে বেরিয়ে আমাদের প্রতিবেদকের গন্তব্য ছিল তেলিয়ামুড়া পৌর পরিষদের ৩নং ওয়ার্ডের সুকান্ত পল্লী এলাকায়। এই এলাকার বাসিন্দা তথা পেশায় ঢাকি বলরাম ঋষিদাস। বাপ ঠাকুরদার কাছ থেকে এই ঢাক বাজানো শিখে বিগত ৩০ থেকে ৪০ বছর যাবত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ঢাক বাজিয়ে নিজের জীবন জীবিকা অতিবাহিত করে আসছে।
কথা প্রসঙ্গে ঢাকি বললাম ঋষি দাস দাবি করেছেন, এবছর অন্যান্য বছরের থেকে বেশ ভালো ঢাকের চাহিদা রয়েছে। অর্ডারও এসেছে বেশ ভালই। তাছাড়া তিনি কথা প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা এই শিল্প থেকে অনেকটাই বিমুখ হয়ে পড়ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি এই শিল্পকে নিয়ে বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েরা তেমনভাবে আগ্রহী হতে নারাজ।
এদিকে একটা অংশ মনে করছে এই ঢাক শিল্প বা রাজ্যের প্রাচীন ঐতিহ্যমন্ডিত ঢাক যে এক প্রকার বিলুপ্ত হওয়ার পথে, তার কিছুটা আভাস ঢাকী বলরাম ঋষি দাসের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে স্পষ্ট।
বলতে দ্বিধা নেই এই ঢাককে আঁকড়ে ধরে একটা বিরাট অংশের মানুষ যেমন আজও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখেন, এর পাশাপাশি দেবী দুর্গার আরাধনা থেকে শুরু করে ধর্মীয় বিভিন্ন আয়োজনে ঢাক অনায়াসে অন্য মাত্রা যোগ করে। কিন্তু এই ঢাক শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকার পরিকল্পিত উদ্যোগ গ্রহণ করুক এমনটাই দাবি শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন সচেতন মহলের।