আগরতলা/জাতীয় ডেস্ক, ১৪ জুন ।। জয়ের আগ পর্যন্ত লড়াই, সবসময়-তার জীবনের মূলমন্ত্র ছিল এটি। ৩৯ বছরের সংক্ষিপ্ত জীবন। কিন্তু কেঁচো হয়ে নয় বরং তিনি বেঁচে আছেন বিপ্লবের বরপুত্র হয়ে। তার উক্তির মত অমর তিনি।
তার সহযোদ্ধা ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে উদ্দেশ্য করে লেখা ১৯৬৫ এর ১ এপ্রিলের শেষ চিঠিতে বলেছিলেন, একটি বিপ্লবে একজন অর্জন করে – বিজয় অথবা মৃত্যু। আর্নেস্তো অর্জন করেছিলেন বুক চিতিয়ে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে বিজয়।
সন্তানদের কাছে লেখা শেষ চিঠিতে লিখেছিলেন, সবার আগে, পৃথিবীর যে কোন জায়গায়, যে কারো বিরুদ্ধে, যে কোন অবিচার গভীরভাবে অনুভব করার জন্য সবসময় নিজেকে প্রস্তুত রাখবে। এটা একজন বিপ্লবীর সবচেয়ে সুন্দর একটি গুণ।
আদ্যেপান্ত চিরকালের বিপ্লবী বিদ্রোহী এই স্বত্তার নাম আর্নেস্তো গুয়েভারা ডেলা সেরনা। দুনিয়ার মুক্তিকামী মানুষের উজ্জ্বল স্বাক্ষরে শুধুই পরিচিত নাম ‘চে’।
আর্নেস্তো গুয়েভারা লিঞ্চ ও ডে লা সেরনার সন্তান। ১৯২৮ সালের ১৪ জুন জন্ম। ১৯৫২ সালে বুয়েন্স আয়ার্স থেকে ডাক্তার হয়েই পুরো লাতিন আমেরিকার সাধারণ মানুষের জীবন-সংগ্রাম উপলদ্ধির জন্য তার পরিভ্রমণ। ১৯৫৪ সালে সিআইএ পরিচালিত এক সামরিক অভিযানে গুয়াতেমালার জাকাবো আরবেনজের নির্বাচিত সরকারের উৎখাত সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী।
রাজনৈতিক কার্যকলাপের দায়ে মৃত্যু পরোয়ানা জারি। গুয়াতেমালা ত্যাগ করে বাধ্য হয়ে মেক্সিকোতে আশ্রয় গ্রহণ করেন চে। কিউবার স্বৈরতন্ত্রী সরকার ফুলজেনসিও বাতিস্তাকে ক্ষমতাচ্যুতের উদ্দেশে নির্বাসিত কিউবার বিপ্লবীরা সেই সময়ে মেক্সিকোতে অবস্থান নেয়।
সেখানেই বিপ্লবীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা এবং ফিদেল কাস্ত্রোর সান্নিধ্য লাভ। ১৯৫৫ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে ২ ডিসেম্বর সিয়েরা মায়েস্ত্রা পাহাড় থেকে কিউবার বাতিস্তা সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনায় কিউবান বিপ্লবীদের সঙ্গী এবং চিকিৎসক।
১৯৫৭ সালের জুলাইতে সশস্ত্র বিপ্লবী বাহিনীর প্রথম কমান্ডার। ১৯৫৯ সালে তীব্র সংগ্রামী লড়াইয়ে বাতিস্তা সরকারের পতন। চে তখন নতুন বিপ্লবী সরকারের অন্যতম নেতা। এরপর জাতীয় ভূমি সংস্কার ও শিল্প দপ্তরের প্রধান। জাতীয় ব্যাংকের সভাপতি, শিল্প দপ্তরের মন্ত্রী। ১৯৬৫ সালে কিউবার কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা। সারা পৃথিবীজুড়ে কিউবার প্রতিনিধিত্ব। আন্তর্জাতিক সম্মেলন ও রাষ্ট্রপুঞ্জে কিউবার প্রধান বক্তা।
১৯৬৫ সালের এপ্রিলে অন্যান্য দেশের মুক্তির সংগ্রামে স্বশরীরে অংশগ্রহণের উদ্দেশ্যে কিউবা ত্যাগ করেন। কিছু সময় আফ্রিকার কঙ্গোতে অবস্থান এবং পরে ফিদেল কাস্ত্রোর ব্যবস্থাপনায় গোপনে কিউবায় প্রত্যাবর্তন।
১৯৬৬ সালের নভেম্বরে বলিভিয়ার নিপীড়িত মানুষের জীবনযুদ্ধে ছদ্মবেশে বলিভিয়ায় প্রবেশ করেন চে। কিউবান বিপ্লবী ও বলিভিয়ার নিপীড়িত মানুষদের নিয়ে গেরিলা বাহিনী গঠন ও বলিভিয়ার সামরিক সরকারের উৎখাতের জন্য শুরু করেন গেরিলা অভিযান ।
৮ অক্টোবর ১৯৬৭ সালে আমেরিকার অনুগত প্রতিক্রিয়াশীল বলিভিয়ান সামরিক বাহিনীর হাতে আহত এবং ৯ অক্টোবর ওয়াশিংটনের নির্দেশে সরাসরি গুলির আদেশে নিহত হন চে গুয়েভারা।
চে গুয়েভারা নিজেই একটি ব্র্যান্ড। এই ব্র্যান্ডের লোগো হচ্ছে চে’র বিপ্লবী জীবন যার অর্থ পরিবর্তন। চে’র জন্মদিনে গনসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকী বলেন, চে গুয়েভারা ছাড়া পৃথিবীর কোন মুক্তি সংগ্রাম স্বপ্নবান হয় না। দেশ-কার-পাত্রের গন্ডি ছাপিয়ে তিনি একই সাথে স্থানীয় এবং আন্তর্জাতিক। মানুষের মুক্তির সংগ্রামে চে’র উপস্থিতি অনিবার্য। আজ তার ৮৮ তম জন্মদিন।
চে গুয়েভারার ৮৮ তম জন্মদিনে রাজ্যেও নানা অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে চে গুয়েভারার জন্মদিন।