গোপাল সিং, খোয়াই, ২১ জুন ।। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় অনেক কিছুইতো হারিয়ে যাচ্ছে। গ্রাম-বাংলার চিত্রটা তার অতীতের সাথে সামঞ্জস্যতা হারিয়ে বসেছে। কিন্তু এমন অনেক কিছু্র মধ্যেই অন্তত পঞ্চাশ-ষাট উর্দ্ধ প্রবীনদের স্মৃতিতে এখনো বেশ কিছুই জীবন্ত। পাখিদের মধ্যে কাক, শালিক, চড়ুই কিংবা ফলের মধ্যে করমচা, ববি, টেকরই, জামরুল, পানিফল, অঢ়বড়ই-এর নাম উল্লেখযোগ্য। তবে আরোও একটি পরিচিত ফল রয়েছে যাকে ‘কাঁঠাল’ বলে। হ্যাঁ, কাঁঠাল গ্রাম-বাংলায় পাওয়া গেলেও বিশেষ একধরনের কাঁঠাল রয়েছে যা প্রায় বিলুপ্ত। নতুন প্রজন্ম হয়তো তা জানবেও না। বলছিলাম ‘চাম কাঁঠালে’র কথা। কিন্তু এই কাঁঠাল কিন্তু আবার কাঁঠাল গাছে ধরেনা। এই বিশেষ কাঁঠাল ‘চামল’ গাছে ধরে। ‘চামল কাঠ’ আমাদের বাড়ী-ঘর তৈরী করতে লাগানো হতো। তবে সব নয়, কিছু চামল গাছে এই বিশেষ কাঁঠাল ধরত। কাঁঠালের আকৃতি ছোট। ছোট্ট বেলুনের মতো। এই কাঁঠালের কোষগুলিও ক্ষুদ্র। কিন্তু খুব সুস্বাদু। টক এবং মিষ্টি স্বাদের হয়ে থাকে ‘চাম কাঁঠালে’র কোষগুলি।
বর্তমানে গ্রাম-বাংলায় বন ধ্বংশের কারনে এই বিশেষ কাঁঠাল কিন্তু দূর্লভ হয়ে পড়েছে। অল্প-বিস্তর গ্রাম-গঞ্জে পাওয়া গেলেও শহুরে মানুষের কাছে এই কাঁঠালের কদর কম। কারন আকারে ছোট কাঁঠাল। কিন্তু কেউই জানেন না এই কাঁঠাল কিন্তু কাঁঠাল গাছের নয়, চামল গাছের। তবে গ্রামের মানুষ কিন্তু এই কাঁঠালের কদর জানেন। খোয়াই সুভাষপার্ক বাজারে হঠাৎ এক কৃষককে এই চাম কাঁঠাল নিয়ে বসতে দেখা যায়। যারা চিনতে পেরেছেন তারা ভীড় জমিয়ে হাতে হাতে কিনে ফেলেন। তবে যারা চিনেন না তাদের জন্য প্রতিবেদকের এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয় কিনা তাই এখন দেখার।
তবে আমরা জানি যে, কাঁঠালের আদি নিবাস ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বতমালা, যেখানে আজও বুনো কাঁঠাল ফলে। কাঁঠাল গাছে ফুল আসে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এবং ফল পাকে মে-জুলাই মাসে। ফলে আছে ভিটামিন ‘এ’ও ‘সি’, আর বীজে শর্করা, প্রোটিন ও চর্বি। রসালো শাঁস তাজা খাওয়া হয় এবং সিরাপ হিসেবেও সংরক্ষণ করা যায়। ভাজা ও সিদ্ধ বীজ এবং বীজের তরকারি যথেষ্ট জনপ্রিয়। এ ছাড়া কাঁচাফল উত্তম সবজি, এ ফল দিয়ে আচারও বানানো যায়। গাছের পাতা ও কাঁঠালের উচ্ছিষ্ট পশুখাদ্য। কাঠ আসবাব ও বাদ্যযন্ত্রে ব্যবহার্য। গোটা ফল বেশি দিন সংরক্ষণ করা যায় না বলে কাঁঠাল বিদেশে রপ্তানি করার উপযোগী নয়। তবে আজকাল অনেকে বিমানে করে এ ফল বিদেশেও নিয়ে যাচ্ছে।
তাই এক্ষেত্রে আমাদের হারিয়ে যাওয়া অনেক কিছুর মধ্যে চামল গাছের এই ‘চাম কাঁঠাল’কে খুঁজে নিয়ে যদি তাকে আবারো আমাদের মাঝে ফিরিয়ে আনা যায়, তারই প্রচেষ্টা করতে হবে। এই সুস্বাদু ফলটাকে সবার নজরে আনতে হবে। এর মাধ্যমেই কিছু কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়ে যেতে পারে! কি বলুন?