গোপাল সিং, খোয়াই, ৫ জুলাই ।। খোয়াই শহর নতুন আঙ্গিকে, নতুন ভাবে সেজে উঠেছে। ব্ল্যাক এন্ড হুয়াইট থেকে রঙীন, আধুনিকতার ছুঁয়া সর্বত্র। কিন্তু আধুনিকতার নামে শহরে তীর-জুয়া-হেন্ডিং-জান্ডিমুন্ডা-কোরেক্স-টেবলেট, নকল বিলেতি মদ এবং দেশী মদের রমরমা ব্যবসা জাঁকিয়ে বসেছে। নিত্য নতুন কায়দায়, নিত্যদিনই কোনও কোন কৌশলে নেশার আইটেম বৃদ্ধি পাচ্ছে। কে কোন বস্তুকে নেশা হিসাবে গ্রহন করছে বলাই মুষ্কিল। ডেন্ড্রাইটকে নেশা হিসাবে ব্যবহার করা যায়, ক’জন জানতেন? নতুন প্রজন্ম ঠিক খুঁজে নিয়েছে নিজের সর্বনাশকে ত্বড়ান্বিত করতে। এছাড়া নিত্যদিনের সঙ্গীগুলি তো রয়েছেই। যেমন খোয়াই শহরে গাঁজার রমরমা আগে এতটা ছিলনা। এখন শুধুমাত্র গাঁজাই নয়, গাঁজার সেবনে এসেছে আধুনিকতা। উন্নতমানের গাঁজার কল্কি উদ্ধারের মধ্য দিয়ে তার প্রমান মিলেছে। আর এই অবৈধ নেশা সামগ্রীর রমরমার কারনে সমাজ এবং নতুন প্রজন্ম পঙ্গু হয়ে পড়ছে। ‘নতুন প্রজন্মকে এমনই ঘোর অমানষির অন্ধকারে নিয়ে যাওয়াই নেশা কারবারীদের মূল লক্ষ্য’ বলছেন খোয়াইয়ের প্রবীন নাগরিকরা। জনৈক পুলিশ কর্তার প্রশ্ন, ‘যদি আমরা নেশা কারবারী থেকে টেক্স আদায় না করি তবে কি নেশা বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে? খোয়াই শহরে হবেনা ! কারন নেশা কারবারী কোন কোন ব্যাক্তি, খোয়াই শহরের অবাল-বৃদ্ধ-বণিতা সবাই জানেন। কিন্তু উনাদের পেছনে মহান ব্যাক্তিরা জড়িত, তা জনগন জানেনা। পুলিশ মানেই ভগবান নয়! নেশা কারবারীদের আটক করতে গেলে জনসচেতনতা আগে আনতে হবে। বিশেষ করে সমাজসেবী সংগঠন, বিভিন্ন ক্লাব এবং এলাকাবাসী। সঙ্গে থাকবে পুলিশ প্রশাসন।’ কিন্তু খোয়াই এর বেশীরভাগ ক্লাবই এই নির্মল সমাজ গড়তে এগিয়ে আসেনা। জমি কেনা-বেচা, ঠিকেদারি নিগোইশন, পূজার চাঁদা সংগ্রহে ব্যস্ত থাকে। যার ফলে সামাজিক খোন দায়বদ্ধতা নেই বেশিরভাগ ক্লাবগুলির। জনগনও বিশেষ এক কারনে এগিয়ে যেতে পারেন না। একটি সরকার এর উপর দায়ভার চাপিয়ে সবাই কেটে পড়েন। অথচ জনগন চিন্তা করেন না আজ থেকে ১০-১৫ বছর পর কি হবে এই যুব সমাজের? কিভাবে লড়াই-সংগ্রাম চালাবে নেশায় ভরপুর যুবসমাজ? নেশার কবলে পড়ে শারিরীকভাবে অক্ষম হয়ে পড়ছে বেশিরভাগ নবিন প্রজন্মের যুবকরা। আর হাতে গুনা কিছু লোক নেশা কারবার করে লক্ষ-লক্ষ কোটি-কোটি টাকা বানিয়ে নিচ্ছে। অথচ সমাজের একটা বৃহৎ অংশের যুবক পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে। যাদের উপর সমাজ গড়ার দায়ভার, তারা আজ ক্ষুদ্র কমিশনের জন্য ধৃতরাষ্ট্র হয়ে আছেন। ইতিহাস কিন্তু একদিন কথা বলবে। ধৃতরাষ্ট্র অন্ধ হয়েও সব বুঝতেন, জানতেন এবং পরিনাম কি হবে তাও জানতেন। তবুও পুত্র মায়ায় কিছু প্রতিবাদ করেননি। যার পরিনাম ভয়য়ঙ্কর হয়েছিল। তাই আজ যারা তীর-জুয়া-হেন্ডিং-জান্ডিমুন্ডা-কোরেক্স-টেবলেট, নকল বিলেতি মদ এবং দেশী মদের ব্যবসায়ীদের সাহায্য করছেন, উনাদের পরিবার এর সদস্যরা কিন্তু আগামী দিনে যোগ দেবে। ওদের ছেলে তখন কি হবে জনগন কিন্তু সব জানেন। বোকা ভাববার কোন অবকাশ নেই। ইতিমধ্যে খোয়াইয়ের জনগন নেশা বিরুধী অভিযানে মাঠে নেমেছেন। যদিও এর আগেও এধরনের নেশা বিরুধী অভিযান হয়েছে খোয়াইতে। কিন্তু একটা সময় পর সব অভিযানই শিথিল হয়ে পড়ে। তাহলে এবারের উদ্যোগও অন্যান্য সময়ের মতো হিমঘরে চলে যাবেনা-তো? তথ্যভিজ্ঞ মহলের অভিমত, অচিরেই এই সমন্ত নেশা-জুয়ার কারবারীদের বিরুদ্ধে সরব হতে হবে। যুব সমাজকে নেশা মুক্ত করতে হবে। আর এক্ষেত্রে এলাকাবাসীদের এগিয়ে এসে ত্রিপুরা রাজ্যের মধ্যে একটি নতুন নজীর সৃষ্টি করার আবেদন খোয়াইয়ের প্রবীন নাগরিকদের।