বিভিন্ন সরকারী কাগজ-পত্র সরকারী দপ্তর থেকে বের করতে দালালের খপ্পরে নাজেহাল খোয়াইবাসী

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

গোপাল সিং, খোয়াই, ২০ জুলাই ।।  খোয়াই জেলা প্রশাসন বা খোয়াই মহকুমা শাসকের কার্য্যালয়। ভারতীয় নাগরিকত্বের পরিচয় পত্র, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, এস.সি./এস.টি./ও.বি.সি., ইনকাম, নানান দলিল, পরচা, এফিডেভিট সহ অন্যান্য সরকারী কাগজ-পত্র হাতে পেতে হলে মহকুমা শাসকের কার্য্যালয়ে যেতে হয়। শহর এলাকার আংশিক জনগন এর এবিষয়ে তেমন কোন অসুবিধা হয়না, কারনটা সবার জানা। বাকি রইল, অন্যান্য সাধারন মানুষের কথা। খোয়াই শহর থেকে ১৫,২০,২৫ এমনকি ৩০, ৩৫ কিমি দুর থেকে কমপক্ষে দেড়শত থেকে দুইশত টাকা খরচ করে খোয়াই মহকুমা শাসকের অফিস-এ বিভিন্ন কাজে আসেন। বেশীর ভাগ জনগনই শ্রমিক-কৃষক। উনারা অধিকাংশই লেখা-পড়া জানেন না বলেই চলে। তারা অফিসটিলা চত্বরে আসা মাত্রই দালালদের খপ্পরে পড়েন। দালালদের সাথে জড়িত অফিসটিলার বেশীরভাগ সরকারী অসাধু কর্মচারীদের মধ্যে আগে থেকেই একটা রিহার্সেল করা থাকে। দালাল যখন বৈধ কাগজ-পত্র নিয়ে জনগনকে সাথে করে ঐ সরকারী কর্মচারীর (সিগন্যাল দেওয়া থাকে) টেবিলে যাওয়া মাত্রই চেচিয়ে উঠবেন, ‘হবে না’। কাগজ পত্র ঠিক নেই। কিছু ভুল ইংরেজী শব্দ ব্যবহার করেন, যা শ্রমিক-কৃষকরা কিছুই বোঝে উঠতে পারেন না। তখন দালাল বাবু ঐ সাধারন মানুষদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘শুনলেন তো কর্তা বাবু ইংরেজীতে কি বললেন?’ সাধারন মানুষ প্রত্তুত্তরে কি বলবেন তা আশা করি সবারই জানা। ‘না বাবু, আমি ইংরেজী বুঝিনা।’ তখনই সুযোগের সদ্ব্যবহার শুরু হয়। দালালরা বলেন কর্তা বাবু (অসাধু সরকারী কর্মচারী)বলেছেন, কিছু টাকা-পয়সা খরচ করতে হবে। জনগন বলেন, এত টাকা কোথা থেকে পাব? দালালের পাল্টা উত্তর, তোমাদের আসতে-যেতে প্রতিদিন খরচ দুইশত টাকা। অফিস বাবুরা টালবাহানা করবেন ২-৩ বা ৬ মাস। তাছাড়া দৈনিক হাজিরা বা মজুরীও হাতছাড়া হবে। সুতরাং একটাই পথ, একমুঠে কিছু টাকা দিয়ে দেন, সব কাজ হয়ে যাবে।’ এই হচ্ছে, সরকারী কাগজ-পত্র অফিস থেকে বের করার জন্য দালাল, অসাধু সরকারী কর্মচারী এবং সাধারন খেটে খাওয়া শ্রমিক-কৃষক শ্রেনীর মানুষের মধ্যেকার বোঝাপড়ার মোটামুটি একটা ধারনা।তবে গ্রামীন বা শহরের আংশিক জনগন কেউই বলতে পারবেন না, বৈধ কাগজ থাকা সত্বেও খালি হাতে কেউ সরকারী কাগজ-পত্র নিতে পেরেছেন! আধার কার্ড বৈধ তবুও ১০০ টাকা। রেশন কার্ড বৈধ তবুও ১৫০ টাকা। পি.আর.টি.সি. ৫০০, ১০০০, ৫০০০ থেকে শুরু করে মক্কেল বুঝে বুঝে দর হাঁকা হয় দালাল কর্তৃক। পরচা-দলিল সব কিছুই হবে, টাকা চাই! টাকা ছাড়া কিছুই হবে না। টাকা ছাড়া উপায় নেই। অনেক অসাধ্য কাজ অফিসটিলা চত্বরের সামান্য চায়ের দোকানের মালিকও করে দিতে পারেন। তারপর রয়েছে প্রকৃত দালালরা। ভাবতে অবাক লাগে খোয়াই অফিসটিলায় অবৈধ দালাল সক্রিয়। মাননীয় মহকুমা শাসককে বিষয়টি বরাবর জানানো হলেও কোন এক অজ্ঞাত কারনে উনি আইনি পদক্ষেপ নেন না। ভাববার বিষয় জনগন যাবে-তো-যাবে কোথায়? গ্রামের জনগন টাকা জোগার করতে ছাগল, গরু, রেশন কার্ড বন্ধক দিয়ে, সুদে টাকা এনে দুষ্টচক্রের পকেট ভারী করলে তবেই সরকারী কাগজ-পত্র হাতে পান। নতুবা শূণ্য হাতেই ফিরতে হয়, অথবা ঘুরতে হয় মাসের পর মাস, বছরের পর বছর।৩-৪ দিন আগেও বিভিন্ন ইন্টারভিউ চলাকালীন সময়ে ইনকাম সার্টিফিকেট এবং পি.আর.টি.সি. নিয়ে ধুন্দুমার কান্ড ঘটে অফিসটিলায়। যথাসময়ে এগুলি দেবার কথা বলে গ্রামীন এলাকার বিশেষ করে মহিলাদের কাছ থেকে দালালরা পাঁচশ, হাজার টাকা নিয়ে নেয়। কিন্তু দালালরা প্রতিশ্রুতি দিয়েও প্রতিশ্রুতি রাখতে না পারায় এবং যথাসময়ে সার্টিফিকেটগুলি দিতে না পারায় শুরু হয় ধুন্দুমার কান্ড। এমনকি পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বাহীনি মোতায়েন করতে হয়। এছাড়া জানা যায়, একজন অস্থায়ী ডিসি সাহেব চোখ বন্ধ করে ইনকাম দিয়ে দিতেন। যে পরিবারের আয় ৫০ হাজার বা ১ লক্ষ, সেই পরিবারকেও মাসে ৬ হাজার ইনকাম দিয়েছেন। পরে দায়িত্ব নেন আরেক জন ডিসি সাহেব। উনি এসে ভুল তথ্যযুক্ত ইনকাম দেওয়া বন্ধ করে দেন। তা নিযেও শুরু হয় ঝামেলা। অথচ সব কিছু জেনে শুনেও খোয়াই মহকুমা শাসক নীলব দর্শক। এনিযে খোয়াই জেলার শ্রমিক-কৃষক-মেহনতী মানুষের দাবী দূর্নীতিবাজ ঘুষখোর কর্মচারী এবং দালাল মুক্ত হউক খোয়াই মহকুমা শাসক অফিস এলাকা।

 

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*