খোয়াই সরকারী দ্বাদশ শ্রেনী বালিকা বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানে ঘোটালা

khowaiগোপাল সিং, খোয়াই, ২০ জুলাই ।।  একে একে দুই। দুই থেকে দুই হাজার। রাজ্যের উন্নয়নের ধারাপাতে বপন করা হচ্ছে মূল-শেকড় বিহীন বীজ। বর্তমান সময়ে রাজ্যের উন্নয়নের মানচিত্রে দ্বিতল-ত্রিতল বিশিষ্ট বা তারও বেশী, নতুন নতুন পাকা বাড়ী নির্মান এক বলিষ্ঠ উদ্যোগ। যেমনটা হল রবিবার। আগরতলা সার্কিট হাউস সংলগ্ন রাস্তার পাশের দোকানীদের উচ্ছেদ করে রাস্তা প্রশস্ত করলেও নতুন বিপণী বিতানে তাদের যোগ্য ঠাঁই হয়েছে। সেটাও দ্বিতল ভবন। এই ভবনের উদ্বোধন করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী রাজধানীর হকারদেরও এমনই এক ছাদনাতলায় আনার জন্য এবং রাজ্য থেকে বস্তি হটিয়ে তাদেরও নতুন পাকা ভবনের মধ্যে স্থান দিতে নিজের ইচ্ছার কথা জানান। কিন্তু কোথায় স্থান দেবেন? নিম্নমানের পাকা ভবনে। যেখানে মূল ফাউন্ডেশনই হচ্ছে নিম্নমানের!খোয়াইতেও দেখা যাচ্ছে এমনই চিত্র। নতুন নতুন ভবন নির্মান হচ্ছে ঠিকই কিন্তু তার ফাউন্ডেশন তৈরীতে হচ্ছে ব্যাপক ঘোটালা। যেকোন সময় ভূমিকম্পে এই ভবনগুলি মৃত্যর মিছিলের কারন হয়ে উঠতে পারে। বর্তমানে খোয়াই দ্বাদশ শ্রেনী বালিকা বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মানের কাজ চলছে। আর তাতেই উঠে আসছে বিস্তর অভিযোগ। ঠিকেদার নিজেই বলছেন নিম্নমানের কাজের কথা। বিগত কুড়ি বছরে একে একে পাল্টে গেছে খোয়াই এবং খোয়াই শহরের রূপরেখা। চারদিক থেকেই উন্নয়নের ধারা বইতে শুরু করেছে খোয়াই এর উপর দিয়ে। বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। খুশি খোয়াই এর সর্বস্তরের জনসাধারন। এখানে কোন প্রকার দ্বিমত নেই যে, খোয়াই এখন আধুনিকতার ছুঁয়ায় সমৃদ্ধ হচ্ছে। কাজ করছেন ঠিকেদাররা। কিন্তু কিছু ঠিকেদার এত নিম্মমানের কাজ করছেন যার ভবিষ্যত অন্ধকার। যেহেতু ত্রিপুরা রাজ্য ভূমিকম্প প্রবন জোন এর মধ্যে ৫নং স্থানে রয়েছে, তাই চিন্তার ভাঁজ আরোও বৃহৎ হচ্ছে। বড়-বড় ভবন নির্মানে টেকনিক্যাল দিকটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারন রাজ্য সরকারের কোষাগার খালি করে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নতুন নতুন ভবন গড়ে উঠছে। সব ঠিকেদার কাজ খারাপ করছেন, তা বলা যায় না। কারন কোটি কোটি টাকার কাজেও বেশ কয়েক লক্ষ টাকার লোকসান হয়েছে, এমনও ঠিকেদার রয়েছেন। তবে বেশীরভাগ দালান বাড়ী এত নিম্নমানের হয়েছে যা ভূমিকম্পের তীব্রতা কতটুকু সহ্য করতে পারবে, তাতে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ থেকেই যাচ্ছে।নিম্নমানের কাজের খেশারত হিসাবে অচিরেই ভবনগুলি ভগ্নদশায় পরিনত হবে, তাতে কিন্তু আপাতত চুলচেরা বিশ্লেষনের প্রয়োজন নেই। কারন আসল ব্যপারটাই লুকিয়ে রয়েছে তৃণমূল স্তরে। মানে ফাউন্ডেশনটাতেই হচ্ছে মূল ঘোটালা। দ্বিতল, ত্রিতল ভবনকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার জন্য ফাউন্ডেশনটা চাই মজবুত। আর যদি তৃনমুল স্তরেই গুন ধরে ফেলে, তবে সেই ভবনগুলির উপরওয়ালাই ভরসা। দেখা যাচ্ছে এসব ক্ষেত্রে স্থানীয় এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে উন্নয়ন কমিটিকে এবিষয়ে জানিয়েও, কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা।দেখা যাচ্ছে খোয়াই সরকারী দ্বাদশ শ্রেনী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের জন্য প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যায়ে নতুন পাকা ভবন নির্মান এর ক্ষেত্রে ব্যাপক ঘোটালা হচ্ছে। হাউসিং বোর্ড কর্তৃক এই নির্মান কাজ চলছে। নির্মান কাজ এর দায়িত্ব প্রাপ্ত ঠিকেদার প্রকাশ্যে বলছেন কাজ পেতেই নাকি উনার কয়েক লক্ষাধিক টাকা খরচ হয়ে গেছে। তারপর রয়েছে অফিস খরচা। রয়েছেন পূর্ত্ত দপ্তরের এক্স-ওয়াই-জেড’রা। এছাড়াও কিছু রয়েছে যা তিনি আকার-ইঙ্গিতে বোঝানোর চেষ্টা করেন। বললেন, তারপর আসবে লাভের অংক। ‍সবদিক ঠিক রেখেই কাজ নিতে হয়েছে। তাই আর কোন চিন্তা নেই।’ কিন্তু জনগন এর প্রশ্ন, ‘কাকে ফাঁকি দিচ্ছে ঠিকেদাররা? তাদের ছেলে-মেয়েরাই তো স্কুলে পড়াশুনা করবে! বিল্ডিং যদি ভেঙ্গে গুড়িয়ে যায়, তবে কি তাদের ছেলে-মেয়েরা বেঁচে যাবে?ঠিকেদার বাবুর পাল্টা উত্তর, ‘আমাদের জানা আছে, কোন কোন বিল্ডিং ভাঙ্গতে পারে বা পড়ে যেতে পারে। আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের ঐসব স্থানে পাঠাবই না। আমাদের টাকার দরকার। কামাই হলে আমাদের ছেলে-মেয়েরা রাজ্যের বাইরে গিয়ে পড়বে। চিন্তার কোন কারন নেই!’জনসাধারন চিন্তিত। বলছেন, এবার সাধারন মানুষের কি হবে? হাতে গুনা কয়েকজন অর্থ কামাইদের জন্য হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী বা নিরপরাধ মানুষ সামান্য ভূমিকম্পে চাপা পড়ে থাকবে? এভাবেই কি হবে উন্নয়ন? প্রকৃত উন্নয়ন বিমুখ শত্রুদের জন্য বিল্ডিং চাপা পড়ে মরতে হবে গরীব-শ্রমিক ও তাদের সন্তান-সন্ততিদের? এধরনের নানান প্রশ্নে উত্তাল ঝড় বইছে খোয়াইবাসীর মধ্যে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*