দেবজিত চক্রবর্তী, আগরতলা, ২৩ জুলাই ।। জাতি, ধর্ম আর বর্ণে বহুধা বিভক্ত এই বর্ণিল ভারতবর্ষকে পুরোপুরি রঙিন করে তুলেছে পরম্পরাগত ধর্মীয় পালাপার্বণ। ঋতু বৈচিত্রের মতো এক একটা উৎসব ভিন্ন মাত্রা নিয়ে হাজির হয়। বারোমাসে তেরো পার্বণের এই দেশে প্রায় নিত্যদিন কোন না কোন ধর্মীয় অনুষ্ঠান লেগেই আছে, তাঁর মধ্যেই যখন কোনো বড় মাপের ধর্মীয় উৎসব পালিত হয় সেখানে আনন্দের ভাগাভাগিতে অন্ততঃ এ দেশে দেখা যায় জাতের বালাই, ধর্মীয় গোঁড়ামী ধুয়ে মুছে সাফ হয়ে যায়।
ত্রিপুরার ঐতিহ্যবাহী খারচী উৎসব সেই ঐক্যের ভারতের মিনি ক্যানভাস। পৌরাণিক শাস্ত্র থেকে জানা যায় খারচী উৎসবের সঙ্গে রাজ পরিবারের যোগসূত্র ছিল। দিন বদলের পালায় অবলুপ্ত ত্রিপুরার রাজন্য শাসন, কিন্তু খারচী বেঁচে আছে আপন মহিমায় মহিমাম্বিত হয়ে। আচার নিষ্ঠা আর পবিত্রতায় চৌদ্দ দেবতার পূজার্চনায় একই নিয়মের প্রতিপালন হলেও আনুসাঙ্গিক পরিবেশে আধুনিকতার সুস্পষ্ট উপস্থিতি। পুরনো আগরতলার এই খারচী উৎসবকে শুধুমাত্র একটা ধর্মীয় পর্ব হিসেবে গন্য করা হয়তো ভুল হবে কারন এই উৎসব সংহতি, সৌভ্রাতৃত্ব আর মিলনের বন্ধনকে মজবুৎ করার সাক্ষাৎ বাস্তবভূমি। পৃথিবীর নানা প্রান্তের ধর্মপ্রাণ মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে ত্রিপুরার খারচী উৎসবের অনন্য বিমুগ্ধতার বার্তা, তারা যেমন ছুটে আসেন খারচীতে তেমনি এই উৎসবেই মানুষের ভীড়ে পাওয়া যায় সাদা চামড়ার সাহেব বিবিদের – লাখো মানুষের পদচারনার ছবির নেপথ্যের শক্তি অনুসন্ধানও চলে পাশাপাশি।
খারচী উৎসবকে কেন্দ্র করে গোটা মন্দির চত্বরকে সুসজ্জিত করা হয়েছে – ৭ দিন চৌদ্দ দেবতার টানে ভীড় জমাবেন লক্ষ লক্ষ ভক্তপ্রান মানুষ – পবিত্র মন্ত্র উচ্চারন, ঢাক, শঙ্খ, কাঁসর আর উলুধ্বনিতে বন্ধনা হবে চৌদ্দ দেবতার – জাতে, পাতে কিংবা পদবীতে নয় মুক্ত প্রানে শুচি শুদ্ধতায় যে যার মনোবাসনা একাগ্রচিত্তে পৌঁছে হর, উমা, হরি, বানী, কুমার, গঙ্গা, লক্ষী, . . . . . . অর্থাৎ চৌদ্দ দেবতার উদ্দেশ্যে।