গোপাল সিং, খোয়াই, ১৭ সেপ্টেম্বর ।। গত ২৬শে আগষ্ট ২০১৫। খোয়াইয়ের ধলাবিল এলাকা। মধ্যযুগীয় বর্বরতার স্বীকার সপ্তম শ্রেনীতে পড়ুয়া এক স্কুল পড়ুয়া। ধলাবিল চা-বাগান এলাকার দিলীপ ঘাঁসী’র ছেলে প্রশান্ত ঘাঁসী বাইক চুরির দায়ে দু’দুবার শারীরিকভাবে যেভাবে নিগৃহিত হলো, তা মধ্যযুগীয় বর্বরতাকেও হার মানাবে। কেবলমাত্র সন্দেহের জেরেই প্রশান্তকে বাড়ী থেকে স্কুল ড্রেস ছাড়িয়ে তুলে নিয়ে যায় দেওয়লিয়া টিলার দীনেশ পাল নামে এক ব্যাক্তি। সেখানে তাকে ততক্ষন পর্য্ন্ত মারধর করা হয়, যতক্ষন না প্রশান্ত অচেতন হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তারপর পুলিশ এসে প্রশান্তকে উদ্ধার করে হাসপাতাল নিয়ে যায় কিন্তু দায়সাড়াভাবে চিকিৎসা করিয়েই তাকে ছেড়ে দেয়। বাড়ী ফিরার সময় আবার তাকে পাকড়াও করে অসীম দাস, নকুল দাস, রঞ্জন দাস এবং গ্রাম প্রধান কৃষ্ণ সরকার। একটি রেশন দোকানে নিয়ে গিয়ে আবারো বর্বরোচিত মারধর শুরু করে। তারা সবাই মিলে শুধুমাত্র বাঁশ, রড দিয়ে পিটিয়েই ক্ষান্ত হয়নি, পায়ের ও হাতের নখ এবং মাথার উপর আস্ত সুঁচটাই গরম করে ঢুকিয়ে দেয়। এমনকি নররাক্ষশের মতো স্কুল পড়ুয়ার শরীরে কামড়ে দেয়ে গ্রাম প্রধান কৃষ্ণ সরকার। মৃত্যু যন্ত্রনায় ছটপট করতে থাকলে তাকে দোকানের বারান্দায় ফেলে রেখেই চম্পট দেয় নরপিশাচরা। এভাবেই নিজের সাথে ঘটা অমানবিক ঘটনা তুলে ধরল স্কুল পড়ুয়া নির্যাতিত ছাত্র প্রশান্ত ঘাঁসী। মুহুর্তেই ভাবুক হয়ে উঠে প্রশান্ত। পুলিশ ও স্থানীয় মাতব্বরদের আচরনে স্তম্ভিত সে।
কিন্তু এই রোমহর্ষক ঘটনার পর কেটে গেছে ২১টি দিন। এখনও সারা শরীরে নরপিশাচদের দেওয়া ঘাঁ জীবিত। বিছানায় শুতে পারেনা প্রশান্ত, শরীরে ব্যাথা হয়।হাঁটতে পারেনা, পা-গুলিতে ব্যাথা হয়। পায়ের কোন ভারসাম্যই নেই। নেই শরীরেও। মাথায় সুঁচ ঢুকিয়ে দেবার পর থেকে মাথার মধ্যে নাকি যুদ্ধ বেঁধে যায়। মুহুর্তেই অশান্ত হয়ে উঠে প্রশান্ত। শরীরে শত শত দগদগে ঘাঁ নিয়ে উদভ্রান্ত হয়ে উঠে প্রশান্ত ঘাঁসী। ৭ম শ্রেনীতে পাঠরত এই ছাত্র, ঠিকভাবে খাবারও গ্রহন করতে পারেনা। ধীরে ধীরে কেমন যেন অসংলগ্ন হয়ে উঠছে প্রশান্ত। চোখ দুটো নিস্প্রভ হয়ে পড়ছে। কথা-বার্তায় একটা মানসিক অবসাদের ছাপ স্পষ্ট। কথা বলতে বলতে ইমোশন্যাল হয়েও নিজেকে কিভাবে যেন সামলে নিচ্ছে প্রশান্ত!!! শেষে বলল, যারা মারছিল তারা বলছিল ‘ওইটাকে মেরে পুঁতে দাও’! আমি চিৎকার করছিলাম, মা-বাবা, মা-বাবা!! কিন্তু একটা সময় বেহুশ হয়ে পড়ি। তারপর ততটাই অমানবিক হয়ে উঠে তারা। কিন্তু শরীরে তখন কোন অনুভুতিই ছিলনা। যত দিন যাচ্ছে শরীরে ততই ক্ষতের ছাপ স্পষ্ট হচ্ছে। পড়াশুনা কি আর হয়ে উঠবে? কিছুই তো মনে থাকেনা!