নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৭ অক্টোবর ।। “শঙ্খ বাজিয়ে মাকে ঘরে এনেছি, সুগন্ধে ধূপ জ্বেলে আসন পেতেছি।
প্রদীপ জ্বেলে নিলাম তোমায় বরণ করে, আমার এ ঘরে থেকো আলো করে।”
উৎসবের মরশুমে এক উৎসবের রেশ ধরেই চলে আসে আর এক উৎসব। দুর্গাপূজার রেশ এখনও কাটে নি। এরই মধ্যে চলে এলেন মা দুর্গার কন্যা ধন ও সৌভাগ্যের দেবী মা লক্ষ্মী। যে মণ্ডপে দুর্গাপূজা হয়েছে সেখানে পূজিতা হন মা লক্ষ্মীও। অবাঙালিদের মধ্যে লক্ষ্মীপূজার রেওয়াজ কালীপুজা বা দিওয়ালির দিনে। কিন্তু বাঙালির ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী পূজিতা হন দেবীপক্ষের শেষের এই পূর্ণিমাতে।
হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী লক্ষ্মী মহর্ষি ভৃগুর কন্যা, পদ্মাসনা আর বাহন শ্বেত পেঁচা। দুর্বাসার অভিশাপে কিছুদিন সমুদ্রে প্রবিষ্টা থাকার পর সমুদ্রমন্থনের সময় উঠে আসেন তিনি। তাঁর এক হাতে পদ্ম, আরেক হাতে অমৃতের কলস। তাঁর রূপে গুণে আকৃষ্ট হয়ে দেব-দানবের মধ্যে যুদ্ধ লেগে যায়। শেষ পর্যন্ত ছলে বলে বিষ্ণু তাঁকে পত্নীরূপে গ্রহণ করেন। সেই থেকে বিষ্ণুর পদপ্রান্তে অধিষ্ঠিতা লক্ষ্মী।
দুর্গাপূজা যেমন মূলতঃ বারোয়ারি, লক্ষ্মীপূজা গৃহস্থের পূজা। ভক্তরা নানা রূপে, কেউ বা প্রতিমা বা কেউ পূজা করেন চিত্র বিচিত্র সরা। যে রাতে লক্ষ্মীর পূজা হয়, সেটি হল কোজাগরী পূর্ণিমা। কো জাগতী – অর্থাৎ কে জেগে আছো – কথাটি থেকে কোজাগরী। ভক্তদের বিশ্বাস, পূজার পর ওই রাতেই নাকি মা ঘরে ঘরে উঁকি দিয়ে দেখেন কে জেগে আছে। আর যে জেগে থাকে, তার হাতেই ধরিয়ে দেন ধন সম্পদে পরিপূর্ণ ঝাঁপিখানি। লক্ষ্মীপুজোয় যে আলপনা দেওয়া হয়, তাতে মায়ের পায়ের ছাপও আঁকা হয়। বিশ্বাস ওই পথেই মা ঢুকবেন গৃহস্থের ঘরে। তবে ধন পাওয়া যাক বা না যাক, অনেকের কাছেই কিন্তু লক্ষ্মীপূজার বরাবরের আকর্ষণ মায়ের প্রসাদে। ভোগের খিচুড়ি, কুচো নিমকি, নারকেল নাড়ু, লুচি তরকারি, পায়েস – কী নেই তাতে?
সোমবার রাতে বিশুদ্ধ পঞ্জিকা তিথি অনুযায়ী পূর্ণিমা লাগতেই বাঙালির ঘরে ঘরে মা লক্ষ্মী পূজা শুরু হয়। মঙ্গলবার সারাদিন পূর্ণিমা থাকায় অনেকে মঙ্গলবারও লক্ষ্মী দেবীর পূজো করেন।