আফগানিস্তানে ভারতীয় দূতাবাসে হামলা

afgnআন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। আফানিস্তানের ভারতীয় দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। রোববার রাতে উত্তরাঞ্চলে দেশটির তৃতীয় বৃহৎ শহর ও বালখ প্রদেশের রাজধানী মাজার-ই-শরীফে অবস্থিত ভারতীয় দূতাবাসে বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে এ হামলা শুরু হয়। দূতাবাস প্রাঙ্গণের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধারে হামলাকারীদের সঙ্গে এখনো বন্দুকযুদ্ধ চলছে আফগান সেনাবাহিনীর। পাকিস্তান সীমান্তের কাছে ভারতীয় বিমান ঘাঁটিতে বন্দুকধারীদের সঙ্গে দীর্ঘক্ষণের লড়াইতে যখন ভারতীয় সেনাবাহিনী ব্যস্ত, ঠিক তখনই প্রতিবেশী দেশ আফগানিস্তানে নিজস্ব দূতাবাসে ঘণ্টাব্যাপী চলমান বন্দুকযুদ্ধ ও বোমা হামলার শিকার হলো ভারত। লড়াই শেষ করতে আফগান নিরাপত্তা বাহিনীগুলো ইন্দো-তিব্বতি সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গে যৌথ প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। উত্তর আফগানিস্তানের কূটনৈতিক এলাকায় অভিযানের দায়দায়িত্ব এখনো স্বীকার করেনি কোনো সংগঠন। আফগানিস্তানে এ নিয়ে একাধিকবার ভারতীয় দূতাবাস হামলার শিকার হলো। আফগান সরকারের মুখপাত্র বালখের প্রাদেশিক গভর্নর মুনির আহমেদ ফরহাদ বলেন, ‘দূতাবাসে হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান চলছে, হামলাকারীদের ঘিরে ফেলা হয়েছে, এলাকাটি একইসঙ্গে আবাসিক হওয়ায় বেসামরিক হতাহতের ঘটনা এড়াতে রাতভর সতর্কতার সঙ্গে কাজ করতে হয়েছে আমাদের।’
নিরাপদ অবস্থানে সরে আসা আফগানিস্তানে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত অমর সিনহা ভারতীয় বার্তা সংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, দূতাবাসের সব কর্মকর্তা ও কর্মচারীর খোঁজ পাওয়া গেছে এবং তারা প্রত্যেকেই নিরাপদে আছেন। এছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো ভারতীয়র হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি বলেও জানা গেছে। দূতাবাসে অভিযান চলছে। এনডিটিভি জানিয়েছে, চার থেকে পাঁচজন হামলাকারী এ ঘটনায় জড়িত আছেন এবং দু’জন নিহত হয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে পাঠানকোটের বিমান ঘাঁটিতে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর দীর্ঘ অভিযানের পরই আফগানিস্তানের ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ঘটনা ঘটল। পাঠানকোটের ঘটনায় এ পর্যন্ত সাত ভারতীয় সৈনিক নিহত হয়েছেন, যার ধারাবাহিকতায় শনিবার দীর্ঘ ১৪ ঘণ্টার লড়াই শেষে রোববার আবারো লড়াই শুরু হয়। সোমবার ভারতীয় সেনাবাহিনীর এক মুখপাত্র এএফপি-কে বলেন, ‘ঘাঁটিতে অভিযান এখনো চলছে। গোলাগুলি অব্যাহত রেখেই আমরা একটু একটু করে নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে অগ্রসর হচ্ছি, অভিযান কখন শেষ হবে, তা বলার সময় এখনো আসেনি।’
মাজার-ই-শরীফের দূতাবাসে হামলার ঘটনা আফগানিস্তানে শীর্ষস্থানীয় ভারতীয় স্থাপনায় এখন পর্যন্ত সর্বশেষ হামলার ঘটনা। ২০০৮ সালে রাজধানী কাবুলের ভারতীয় দূতাবাসে এক গাড়িবোমা হামলায় ৬০ জন নিহত হয়েছিলেন এবং এরপর ২০০৯ সালে আবারো দূতাবাসটি আত্মঘাতী হামলার শিকার হয়েছিল। পূর্বাঞ্চলীয় আফগান শহর জালালাবাদের ভারতীয় দূতাবাসে ২০১৩ সালের আগস্টে এক হামলায় সাত শিশুসহ নয়জন নিরীহ মানুষের প্রাণহানি হয়েছিল। পরের বছর মে মাসের এক ভোরে পশ্চিম আফগান শহর হেরাতের ভারতীয় দূতাবাস শাখাতেও হামলা চালিয়েছিল বন্দুকধারীরা।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আফগানিস্তানে সফরকালীন ভারতের ৯০ মিলিয়ন ডলারের অনুদানে নির্মিত নতুন সংসদ ভবন উদ্বোধন ও তিনটি রুশ হেলিকপ্টার উপহার দেওয়ার এক সপ্তাহ পরই সহিংসতা শুরু হলো। আফগানিস্তান সফর শেষে হঠাৎ করেই পাকিস্তানে এক আকস্মিক সফরে গিয়েছিলেন মোদি, যা গত ১১ বছরের মধ্যে কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্য এবারই প্রথম সফর। কাবুলে তালেবান পরবর্তী সরকারের অন্যতম সমর্থক দেশ ভারত। আফগানিস্তানে বিদ্রোহরত জঙ্গিদের সঙ্গে শান্তি আলোচনা আবারো শুরু করার জন্য নতুন করে শুরু হওয়া আন্তর্জাতিক চাপের সঙ্গে এসব সহিংসতার সম্পর্ক থাকতে পারে। আফগানিস্তান, পাকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মধ্যে শান্তি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে প্রথম দফায় আগামী ১১ জানুয়ারি আলোচনায় বসবে আফগানিস্তান ও পাকিস্তান। জুলাইতে একবার আলোচনা শুরু করে মাইলফলক স্থাপন করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু তখনই তালেবান নেতা মোল্লা ওমরের দীর্ঘদিন আগে মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হলে আলোচনা স্থগিত হয়ে যায়।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*