জাতীয় ডেস্ক ।। পাকিস্তানের প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশের পাঠানকোটে বিমানবাহিনীর ঘাঁটিতে হামলার ঘটনার পেছনে রয়েছে বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউজের এক সাবেক শীর্ষ কর্মকর্তা। ১৫ বছর আগে আইএসআই’র সৃষ্টি করা একটি সন্ত্রাসী সংগঠনই এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে বলেও জানান তিনি।
হোয়াইট হাউজের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদে কাজ করতেন ব্রুস রিডেল। ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধকালীন পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ এবং তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপ্রধান বিল ক্লিনটনের মধ্যে অনুষ্ঠিত বৈঠকে উপস্থিতি হাতেগোণা কয়েকজনের মধ্যে রিডেল অন্যতম। তিনি জানান, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সুসম্পর্কের সম্ভাবনার অবসান যেকোনোভাবে প্রতিরোধ করতেই এই হামলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আর বড়দিনের সময় পাকিস্তানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আকস্মিক সফরে দু’ দেশের বৈরিতা লাঘবের সম্ভাবনা সৃষ্টি হওয়ায় পরিকল্পনা কাজে লাগানো হয়েছে। ডেইলি বিস্টে এক লেখায় রিডেল বলেন, প্রায় একই সময়ে পাঠানকোটে এবং উত্তর আফগানিস্তানের মাজার-ই-শরীফের ভারতীয় দূতাবাসে হামলার ঘটনা পাকিস্তানী সন্ত্রাসী সংগঠন জাইশ-ই-মুহাম্মাদের কাজ। সংগঠনটি ১৫ বছর আগে তৈরি করেছিল খোদ আইএসআই (আন্তঃবাহিনী গোয়েন্দা সংস্থা)। এই মন্তব্যের ব্যাখ্যা হিসেবে তিনি ‘সঠিকভাবে অবগত সংবাদমাধ্যম ও অন্যান্য ওয়াকিবহাল সূত্র’র কথা উল্লেখ করেছেন।
তিনি জানান, আইএসআই পরিচালিত হয় সেনাপ্রধানদের তত্ত্বাবধানে এবং সংস্থাটি সেনাসদস্যদের নিয়েই গঠিত। ফলে গোয়েন্দা সংস্থাটি সরাসরি নিয়ন্ত্রণ করে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী। প্রতিবেশী দেশ ভারতকে হুমকি বিবেচনায় পাকিস্তানের বার্ষিক জাতীয় আর্থিক পরিকল্পনার একটি বড় অংশ বরাদ্দ থাকে আইএসআই ও পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির জন্য। তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে উত্তাপ কমবেশি হওয়ার ওপর নির্ভর করে পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা নীতির ওপর পাক সেনাবাহিনীর প্রভাব বিস্তার। তাই দেশটির সেনাবাহিনী জাইশ-ই-মুহাম্মাদ ও লস্কর-ই-তায়্যিবার মতো জঙ্গি সংগঠনগুলোকে ‘ভালো’ হিসেবে ও পাকিস্তান তালেবানের মতো সংগঠনগুলোকে ‘খারাপ’ জঙ্গি সংগঠন হিসেবে আলাদা নজরে দেখে, তা মার্কিন নেতারা কয়েক দশক ধরে এ বিষয়ে যতই পাকিস্তানকে সতর্ক করুক না কেন।’ মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা- সিআইএ’র সাবেক কর্মকর্তা রিডেল আরো জানান, ১৯৯০’র দশক থেকে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন নওয়াজ শরীফ, আর তার এই প্রচেষ্টায় দীর্ঘদিন ধরে বাধা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে পাক সেনাবাহিনী। তিনি বলেন, ‘১৯৯৯ সালে সেনাবাহিনীর এক অভ্যুত্থানে তিনি (শরীফ) প্রায় এক দশকের জন্য সৌদি আরবে নির্বাসিত ছিলেন। তার জন্মভূমি লাহোরে বড়দিনে তিনি মোদির আকস্মিক সফরকে আন্তরিকতার সঙ্গে গ্রহণ করায় নিঃসন্দেহে সেনাপ্রধানদের ক্ষুব্ধ করেছে।’ অনেক বছর আগেই জাইশ-ই-মুহাম্মাদকে যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধের তালিকায় ফেললেও সংগঠনটি পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর যত্নে পরিপুষ্ট হয়ে উঠছে বলেও জোর দিয়েছেন রিডেল।