ক্যালেন্ডার লটারি ছেয়ে গেছে খোয়াইতে – অজান্তেই শিশুদের বিপদে ঠেলে দিচ্ছে সভ্য সমাজ

khwগোপাল সিং, খোয়াই, ১৭ জানুয়ারী ।। লাখ লাখ টাকা পুরস্কারের আশায় অহরহ পরিশ্রম, কাষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে একটা লটারির টিকিট কিনেন নি, এমন লোক কমই আছেন! কারন গোটা বিশ্বেই বিপুল পরিমান অর্থ পুরস্কার হিসাবে দেওয়া হয় বিভিন্ন লটারিতে। এটা অর্থ কামাইয়ের এমন এক স্বপ্ন যা সবাই পুরন করতে চান। কিন্তু দু:খজনক হলেও সত্য যে, প্রত্যেক মানুষের লটারি জেতার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ইউরোপের মতো দেশে ২৯ কোটি ৯২ লাখ মানুষের মধ্যে লটারি জেতার সম্ভাবনা থাকে মাত্র ১ জনের। তারপরও কেন মানুষ একটা লটারি কেনার পেছনে ছুঁটেন? তারমধ্যে অনলাইন লটারি তো অনেককেই প্রলোভনে পা ফেলতে কেবল ধাক্কা দেয় বারে বারে। এছাড়াও জুয়ার রমরমা বাণিজ্য মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। 
বড়দের পেছন ছেড়ে এবার ছোটদের, খুদে শিশুদের মস্তিস্ক খেয়ে ফেলতে বাজারে এসেছে ক্যালেন্ডার লটারি। আমাদের খোয়াইতে, বলতে গেলে গোটা খোয়াই জুড়েই তীর-জুয়া-হেন্ডিং-টেবলেট-এর রমরমা ব্যবসা। তার সঙ্গে বর্তমানে যুক্ত হয়েছে এক বৈচিত্রময় খেলা। এই খেলায় যোগ দিচ্ছে এবং উৎসাহ দিচ্ছে কিছু ব্যবাসয়ীরা। একটি ক্যালেন্ডারে আছে ছোট বাচ্চাদের লোভনিয় পুরস্কার। মাত্র ১ টাকায় মিলছে কুপন। খবরটাকি আর বেশিদুর চেপে থাকার কথা! আজকাল বাচ্চাদের যে টিম নেটওয়ার্ক। কোনও রুচিকর খবর যেমন কোন চিপস-এর প্যাকেটে কতটা কার্টুন ইত্যাদি এজাতীয় খবর ছড়িয়ে পড়ে বাতাসের আগে। বর্তমানে খোয়াইতেও তেমনটাই হতে দেখা যাচ্ছে। মাত্র ১ টাকার কুপনে লোভনীয় পুরস্কার দিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে লটারি ব্যবসায়ীরা। কি কি মিলছে মাত্র ১ টাকার কুপনে? বিভিন্ন খেলনা, গেইম বোর্ড, ঘড়ি, চশমা, কলম, এবং নগদ টাকাও! দেখা গেল একের পর এক কুপন স্ক্রেচ করেই যাচ্ছে শিশুরা। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা, কোন পুরস্কারটা লাগল! কিন্তু না একের পর এক স্ক্রেচ কার্ড ঘষেই যাচ্ছে কিন্তু আসছেনা সেই নম্বরটা। দেখা গেল এক খুদে শিশু যে কিনা কিছুই বোঝে না, কি লটারি বা কি তার কুপ্রভাব। অথচ দোকানী এবং খুদ অভিভাবক এককাট্টা হয়েই শিশুটিকে উৎসাহ দিতে দেখা যায়। অথচ সরকারিভাবে কোন অনুমোদন নেই এসব লটারির। তাই কোনও প্রশাসন আছে বলেই মনে করেন না জনসাধারন। 
খোয়াইয়ের সুভাষপার্ক প্রাণকেন্দ্র, কোহিনুর চত্বর, খোয়াই জেলা হাসপাতাল এলাকা, মহারাজগঞ্জ বাজার, বনকর সহ গ্রামীণ ব্যাঙ্কের আশপাশ এলাকা এবং গোপালনগর, আশারামবাড়ী, চাম্পাহাওড়, তুলাশিখর, চেবরী, রামচন্দ্রঘাট, আমপুরা, রতনপুর, বেলছড়া, পহরমুড়া সহ বিস্তীর্ণ এলাকার গরীব-শ্রমিক মেহনতী মানুষ, রিক্সা চালক, দিনমজুর থেকে শিক্ষিত সমাজের বিরাট একটা অংশ এই জুয়া খেলায় মজেছেন। মাদক গ্রহন সহ নেশার অন্ধকারে ডুবছেন।জনসাধারন চোখে দেখতে পেলেও প্রশাসন কিছুই দেখছেনা। কোনও এক অজ্ঞাত কারনে প্রশাসন ধৃতরাষ্ট্র।
অথচ খোয়াই শহরটাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে কিছু লোভী মানুষ। কিন্তু প্রশাসনের অতি কামাই করার জন্য খোয়াই শহরের এই অবস্থা। সমগ্র খোয়াই শহরের কথা না বলে জনগন খোয়াই থানা এলাকার কথাই বলছেন। থানা চত্বর থেকে ১৫ হাত দুরেই হেন্ডিং, জুয়া, দেশী মদ থেকে বিলেতি মদ, কেরোসিন পাচার হচ্ছে অবৈধভাবে। কোরাক্স, ট্যাবলেট-এর গোদাম ঘর। ‘নাকের জন্য নাকি চোখে দেখে না’ এই প্রবাদ বাক্যটাকেই সত্যি করে দেখাচ্ছে খোয়াই থানা বাবুরা। খোয়াই থানা এলাকাই যদি এরকম হয় তবে ভেবে দেখুন সমগ্র খোয়াইয়ের অবস্থাটা কি? বলছেন জনসাধারন। 
সমাজসেবী সংস্থা, বিভিন্ন ক্লাব উদ্যোগ নিলেও কোনও রকম প্রয়াসে এগিয়ে আসছেনা পুলিশ প্রশাসন। এভাবেই দিনের পর দিন জুয়া, মদ আর নেশার পাশাপাশি ছেয়ে যাচ্ছে অবৈধ লটারি ব্যবসা। শিশুদের মগজ ধোলাইয়ের কাজটা এখনই সেরে নিতে ব্যস্ত লোভী ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আগামী দিনে এই লটারি যে বড় রকমের জুয়া আসক্তির কারন হয়ে উঠবে সেদিকে নজর নেই প্রশাসনের। উদাসীন অভিভাবকরাও। চাই সচেতনতা। চাই সুষ্ঠু প্রশাসনিক পদক্ষেপ। দাবি খোয়াইবাসীর।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*