আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। রাগের বশে এক আফগান নারীর নাক কেটে দিয়েছেন তার স্বামী। ঘটনার শিকার ২০ বছরের তরুণী রেজা গুলের ছবি ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোসহ অনলাইনের মাধ্যমে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এ ঘটনাকে ‘বর্বর’ আখ্যায়িত করে দোষী ব্যক্তির শাস্তি দাবি করেছেন ক্ষুব্ধ জনসাধারণ ও মানবাধিকার কর্মীরা। উত্তরপশ্চিমাঞ্চলীয় ফারিয়াব প্রদেশের ঘোরমাক জেলায় রোববার এ ঘটনার পর দ্রুত আহত রেজা গুলকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বড় ধরনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার মুখমণ্ডলের অংশটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব হলেও এ ধরনের চিকিৎসা আফগানিস্তানের স্থানীয় সরকারি হাসপাতালে সম্ভব নয়।
ঘটনার পর তার স্বামী মোহাম্মদ খান জঙ্গি সংগঠন তালেবান নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পালিয়ে গেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ছোট আকৃতির ছুরি দিয়ে তিনি এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে বার্তা সংস্থা এএফপি-কে জানিয়েছেন প্রাদেশিক সরকারের মুখপাত্র আহমেদ জাবেদ বেদার। অভিযুক্ত ব্যক্তি বেকার ছিলেন এবং সম্প্রতি প্রতিবেশী দেশ ইরান থেকে দেশে ফিরে এসেছিলেন। এ ঘটনায় আফগান সমাজে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতার মহামারী রূপটি আরো একবার আলোচনায় উঠে এল। ২০০১ সাল থেকে চলমান মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক অভিযানের মাধ্যমে আফগানিস্তানের তৎকালীন ক্ষমতাসীন কট্টর ইসলামপন্থী তালেবান জঙ্গিরা উৎখাত হওয়ার পর দেশটিতে সরকার পুনর্গঠন হলেও নারীর বিরুদ্ধে সহিংস পরিস্থিতিতে কোনো পরিবর্তন আসেনি। রাজধানী কাবুলভিত্তিক নারী অধিকার কর্মী আলেবা এএফপি-কে বলেন, ‘এ ধরনের নির্মম ও বর্বর অপরাধ তীব্র নিন্দার যোগ্য। সরকারের বিচারিক পদ্ধতি নারীর ওপর হামলাকারীদের কঠোর শাস্তি দেওয়ার মতো হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতই না।’ ঘটনার কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। আহত তরুণীর পাঁচ বছর আগে কিশোর বয়সে বিয়ে হয়েছিল এবং বর্তমানে তার এক বছরের একটি সন্তান রয়েছে। আফগান সরকার নারীদের অধিকার রক্ষায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হলেও দেশটিতে নারীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা কমেনি। গত নভেম্বর মাসে দেশটির কেন্দ্রীয় ঘোর প্রদেশে অবৈধ সম্পর্কের জেরে এক তরুণীকে পাথর ছুঁড়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। তার আগে মার্চ মাসে খোদ রাজধানী কাবুলে পবিত্র কুরআন পোড়ানোর অভিযোগে এক নারীকে পিটিয়ে জীবন্ত আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। ২০১০ সালে অত্যাচারী স্বামীর হাতে নাক হারানো আরেক তরুণী ১৮ বছরের বিবি আয়েশার ছবি প্রকাশ করেছিল ব্রিটিশ টাইম ম্যাগাজিন। ওই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে আয়েশার প্রতি সহানুভূতি তৈরি হলে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা করা হয়।