আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। সপ্তাহজুড়ে চলা ভয়াবহ তুষারঝড়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের লাখো বাসিন্দা বরফ সরানোর কাজ শুরু করেছেন। স্মরণকালের ভয়াবহ তুষাপাতে ওই অঞ্চল কার্যত অচল হয়ে পড়েছে। সারা দেশে এ পর্যন্ত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, যার বেশিরভাগ ঘটেছে সড়ক দুর্ঘটনায়। কয়েকজন প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। আহত হয়েছে কয়েকশ’ নাগরিক। সিএনএনের খবরে বলা হয়েছে, বরফের ওপর দিয়ে গাড়ি চালাতে ও তুষার সরাতে গিয়ে নিউজার্সি, টেনেসি, নর্থ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া, কেন্টাকি ও ম্যারিল্যান্ডে এসব হতাহতের ঘটনা ঘটে বলে রাজ্যগুলোর কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে। বিবিসির খবরে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাসিন্দারা বরফের স্তুপ খুঁড়ে তাদের গাড়ি বের করছেন, রাস্তাগুলো পরিষ্কার করছেন। দেশটির পাঁচটি অঙ্গরাজ্যে তিন ফুটের বেশি পুরু তুষার পড়েছে। দেশটির বেশিকিছু এলাকায় কর্মচাঞ্চল্য শুরু হলেও রাস্তার তুষার জমার কারণে গণপরিবহনগুলোকে দারুণ বেগ পেতে হচ্ছে। রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসির সরকারি কার্যালয় ও অনেক স্কুল সোমবার খুলে দেওয়া হবে। খবরে বলা হয়েছে, এবারের তুষারপাত সাড়ে আট কোটি মানুষের কর্মজীবনে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এখনো তিন লাখ লোক বিদ্যুৎহীন অবস্থায় রয়েছেন। গ্লিগারি ও ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ায় সর্বোচ্চ প্রায় চার ফুট তুষার পড়েছে। নিউইয়র্ক সিটিতে ১৮৬৯ সালের পর থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তুষার পড়েছে। শহরটিতে যানচলাচলের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। তবে রাস্তা থেকে তুষার না সরানো পর্যন্ত বাসিন্দাদের বাড়িতে অবস্থানের আহ্বান জানিয়েছেন সেখানকার সরকারি কর্মকর্তারা। নিউইয়র্কের মেট্রোপলিটন ট্রান্সপোর্টেশন অথরিটি জানিয়েছে, সোমবার সকাল থেকেই সব ধরনের গণপরিবহন চালু করা হবে।
সপ্তাহজুড়ে বরফে ঢাকা গাড়ি ত্যাগ করার জন্য বাসিন্দাদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন শহরটির মেয়র বিল ডি ব্লাসিও। ফিরতি টুইটে তিনি এও বলেছেন, শহরটি আগের অবস্থায় দ্রুতই ফিরে আসছে।
খবরে বলা হয়, ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রো, রেল, ও বাস সার্ভিস সীমিত আকারে চলাচল করায় যাত্রী দুর্ভোগ বেড়েছে। কিন্তু সেখানকার সরকারি কর্মকর্তারা এ জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া না নেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। হাইওয়ে পেনিসিলভানিয়া ট্রানপাইক পুনরায় খুলে দেওয়া হয়েছে। হাজারো গাড়ি সেখান থেকে মূল শহরে যাওয়ার চেষ্টা করছে। ঝড় থামলেও মঙ্গলবারের আগে ওয়াশিংটন, ফিলাডেলফিয়া ও নিউইয়র্কের বিমানবন্দরগুলো চালু করা সম্ভব হবে না বলে জানিয়েছে দেশটির ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অথরিটি।
বিবিসি বলছে, সোমবারের কয়েকশ বিমানের ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। সপ্তাহজুড়ে প্রায় ১২ হাজার ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে।
সিবিএসের খবরে বলা হয়েছে, তুষার সরাতে এরই মধ্যে কুইন্সে ৮৬০টি গাড়ি নামানো হয়েছে। ব্রুকলিন, ব্রঙ্কস, ম্যানহাটান ও স্টেটেন আইল্যান্ডেও নগর কর্তৃপক্ষের কয়েকশ গাড়ি রাস্তা পরিষ্কার করছে। এদিকে এ তুষারঝড়ে ক্ষতির পরিমাণ ৮৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে ধারণা করছে ‘ওয়েদার কোম্পানি ’।
আবহাওয়াভিত্তিক খবর ও বিশ্লেষণের জন্য বিখ্যাত এ কোম্পানির ভাইস প্রেসিডেন্ট পল ওয়ালশ রোববার ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেন, ‘দৈনিক ১৬ বিলিয়ন ডলারের অবদান রাখে, আক্রান্ত এলাকার এমন উৎপাদনমুখী সেক্টরে তুষারঝড় মারাত্মক প্রভাব ফেলবে।’ তিনি বলেন, ‘শুক্র ও শনিবার কমপক্ষে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতি হয়েছে। সোমবারও যদি হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলো ব্যবসা করতে না পারে তাহলে ক্ষতির পরিমাণ ৮৫০ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
নর্থ আমেরিকা ট্র্যাভেল এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট নাজমুল হুদা বলেছেন, ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে। বাতিল হওয়া ফ্লাইটের যাত্রীরা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। তাদের টিকিট পরিবর্তনের চেষ্টা চলছে। এ নিয়ে চিন্তিত হওয়ার কারণ নেই। দেশটির কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, তুষারপাতে ব্যাপক ক্ষতি হলেও খুবই শিগগিরই দেশ স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে।