আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। হাতে-পায়ে গাছের মতো শিকড় গজানোর বিরল রোগে আক্রান্ত বাংলাদেশের আবুল বাজনাদারের নামটি এখন খুবই আলোচিত। দেশি-বিদেশি বিভিন্ন গণমাধ্যম তাকে নিয়ে প্রতিবেদনে তৈরি করেছে। বর্তমানে তিনি ‘বৃক্ষমানব’ হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন দেশ তাকে চিকিৎসার জন্য সাহায্য করার কথা বলেছে। জাতিসংঘের স্বাস্থ্য সংস্থা এ ব্যপারে এগিয়ে এসেছে।
তার রক্ত, মূত্র ও ডিএনএর নমুনা পরীক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পরীক্ষাগারে পাঠানোর হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান তাকে চিকিৎসা দেওয়ার আগ্রহ জানিয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও তার চিকিৎসার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন। এ রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা খুবই কম। তবে এই রোগে আক্রান্ত আরেকজনকে খুঁজে পাওয়া গেছে। দীর্ঘদিন এই রোগে ভুগে গত শনিবার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি। তার নাম ডেডে কসওয়ারা (৪২)। ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক। তবে তার মৃত্যুর খবরটি গণমাধ্যমে আসে বৃহস্পতিবার। পৃথিবীতে এমন রোগে আক্রান্তে সংখ্যা কত তা জানা যায়নি। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, বিশ্বে মাত্র তিনজন ব্যক্তি এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। চিকিৎসকদের জানা নেই এই রোগের কোনো স্থায়ী কার্যকরী চিকিৎসা। খবরে বলা হয়, গত তিনমাস ধরে ডেডে হাসপাতালে লড়াই করছিলেন। আশা ছিল- চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে পাবেন তিনি। নিজের সংসারকে ভালো করে সাজিয়ে-গুছিয়ে নেবেন। কয়েক দশক ধরেই এই রোগে ভুগছিলেন ডেডে। কয়েক দফা অস্ত্রোপচার করেও থামানো সম্ভব হয়নি এই মরণব্যাধিকে। অবশেষে পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হলো তাকে। চিকিৎসকদের একজন জানান, অস্ত্রোপচার করতে করতে একটা সময় তিনি নিজেই বাঁচার হাল ছেড়ে দেন। কয়েক দশক ধরে তিনি তার সংসার, পেশা ও স্বাধীনতা থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। খবরে বলা হয়, ডেডে লিওয়ানিডোওস্কি-লুটজ ডায়াসপ্লাসিয়া ভুগছিলেন। এ রোগের ফলে অনিয়ন্ত্রিত হিউম্যান পাপিলোমা ভাইরাসে (এইচপিভি) সংক্রমণ ও গাছের বাকলের মতো আঁশযুক্ত আঁচিল (জড়ুল) তৈরি হয়। তিনি হেপাটাইটিস, লিভার ও গ্যাস্ট্রিকের মতো মারাত্মক জটিল রোগের কারণে মারা যান। ডেডের বোন বলেন, ‘সে এত দুর্বল হয়ে পড়েছিল যে, নিজে নিজে কোনো খাবার খেতে পারত না। কথাও বলতে পারত না। তাকে পরিবার থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল মরার আগ পর্যন্ত। কিন্তু সে কখনো বেঁচে থাকার আশা ছাড়েনি।’ ডেডের একজন নার্স বলেন, এ রোগ হওয়া স্বত্ত্বেও ডেডে সুস্থ হতে চেয়েছিলেন। লোকজন তাকে অভিশপ্ত বলে ছেড়ে গেলেও তিনি রোগটি মোকাবিলা করে যাচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘যখন কোনো কিছুই সফল হচ্ছিল না তখন হাসপাতালে বেডে থাকতে থাকতে তার বিরুক্ত চলে এসেছিল। সময় কাটানোর জন্য প্রায় ধূমপান করতেন। তিনি তার নিজের কাঠ মিস্ত্রির পেশায় ফিরে যেতেও চেয়েছিলেন।’ ডেইলি মেইল জানায়, তার হাতে ও পায়ের পাতায় প্রায় ছয় কেজি আঁচিল হয়েছিল। যেটা গরু কিংবা মহিষের শিংয়ের মতো শক্ত। ভরণপোষণ দিতে না পারায় ১০ ধরে তার দুই ছেলে ও স্ত্রী আলাদা ছিলেন। ২০০৮ সালে প্রায় ছয় কেজি আঁচিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কেটে ফেলা হয়। কিন্তু এটা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় ফের আগের অবস্থায় চলে আসে।