জাতীয় ইউ.আই.পি. প্রকল্পে পেন্টাভ্যালেন্ট ও আই.পি.ভি. টীকাকরন কর্মসূচীর সূচনা খোয়াইতে

khwগোপাল সিং, খোয়াই, ০২ নভেম্বর ।। শৈশবকালীন রোগ প্রতিরোধের সবচেয়ে সুপচিত এবং কার্যাকর পদ্ধতি হল টীকা প্রদান। ভারত সরকারের সার্বজনীন টীকাকরন প্রকল্প কয়েকটি নির্বাচিত রাজ্যের জাতীয় টীকাকরন প্রকল্পে পেন্টাভ্যালেন্ট টীকা অন্তর্ভূক্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই লক্ষ্যেই রবিবার খোয়াই জেলায় এই টীকাকরনের সূচনা হলো। খোয়াই জেলা হাসপাতালের ম্যাডিক্যাল সুপারিনটেন্ডেন্ট এর উদ্যোগে পেন্টাভ্যালেন্ট ও আই.পি.ভি. টীকাকরন কর্মসূচীটির সূচনা লগ্নে বেশ কিছু শিশুকেই এই টীকা প্রদান করা হয়।পেন্টাভ্যালেন্ট টীকা শিশুকে ৫টি মারন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা দেয় ডিপথেরিয়া, পারটুসিস, টিটেনাস, হেপাটাইটিস বি এবং এইচ আই বি (হিমোফিলাস ইন্ফুলেঞ্জা টাইপ-বি)। ডিপিটি (ডিপথেরিয়া-পারটুসিস-টিটেনাস) এবং হেপাটাইটিস-বি টীকা ইতিমধ্যেই ভারতবর্ষের নিয়মিত টীকাকরন প্রকল্পের অন্তর্ভূক্ত। এইচ আই বি নতুন যোগ করা হয়েছে। মিলিতভাবে এটিকে পেন্টাভ্যালেন্ট টীকা বলা হয়। পেন্টাভ্যালেন্ট টীকা দিলে শিশুকে কম সংখ্যক ইঞ্জেকশন দিতে বা কম বার সূঁচ ফোটাতে হয় এবং একই সঙ্গে ৫টি রোগ প্রতিরোধ করা যায়। টীকাকরণ প্রকল্পের প্রাথমিক টীকা সূচীর অন্তর্গত হেপাটাইটিস বি এবং ডিপিটি’র বদলে পেন্টাভ্যালেন্ট টীকা দেওয়া হবে।
পেন্টাভ্যালেন্ট টীকা সম্পর্কে সচেতনতা এবং চাহিদা বাড়ানোর জন্য প্রচার করতে এবং সমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে মিডিয়া ওয়ার্কশপের আয়োজন করা হয় রবিবার। খোয়াই জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. পি.কে.দাস এই টীকাকরনের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। বললেন, হিমোফিলাস ইন্ফুলেঞ্জা টাইপ-বি ব্যাকটেরিয়াকে সংক্ষিপ্তভাবে এইচ.আই.বি. বলা হয়। এই ব্যাকটেরিয়ার কারনে শিশুর মস্তিস্ক ও সুষম্নাকান্ডকে ঢেকে রেখে রক্ষা করা ঝিল্লি’র প্রদাহ সৃষ্টি করে, যা একটি গুরুতর সংক্রমন। তাছাড়া ফুসফুসের প্রদাহ, রক্তে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর উপস্থিতি, গ্রন্থির প্রদাহ, স্বরতন্ত্রীর চারিপাশে প্রদাহ বা স্ফীতি এবং শ্বাসনালী আটকে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা বা রোগ হয়। এইচ আই বি আর হেপাটাইটিস-বি এক রোগ নয়। বেশিরভাগ সময় ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের এইচ আই বি সংক্রমন হয়। ৪ মাস থেকে ১৮ মাস বয়সী শিশুদের সংক্রামিত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ৫ বছরের পর শিশুর শরীরেই এই রোগ প্রতিরোধের অ্যান্টিবডি তৈরী হয়, তাই তাদের এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বিরল। কিন্তু অ্যান্টেবায়োটিক এবং সবচেয়ে উন্নতমানের চিকিৎসা সত্বেও ৩% থেকে ৫% মেনিঞ্জাইটিস রোগীর মৃত্যু হয়।
সাধারনত নিয়মিত টীকাকরনের অংশ হিসাবে ১ বছর বয়স পর্যান্ত (৬ সপ্তাহের পর থেকে ১ বছরের মধ্যে) সব শিশুকে এইচ আই বি টীকা দিতে হবে।দিতে হবে ৩টি ডোজ। তাছাড়া ডি পি টি, হেপাটাইটিস-বি এবং এইচ আই বি, তিনটিই ৬, ১০ এবং ১৪ সপ্তাহ বয়সে দিতে হয়। কাজেই এই তিনটি টীখা আলাদা আলাদাভাবে দিলে শিশুকে একই সঙ্গে তিনবার সূচঁ ফোটাতে হবে। প্যান্টোভেলেন্ট টীখা দিলে শিশুকে কমবার সূঁচ ফোটাতে হবে। তাই টীকাকরনের স্লোগান ‘১টি টীকা ৩বার দিয়ে/শিশুর ৫টি রোগ প্রতিরোধ করুন!’
কারন সারা বিশ্বে এইচ আই বি ৩৭০,০০০ জনেরও বেশী ৫ বছরের চেয়ে কমবয়সী শিশুর মুত্যুর কারন। এদের মধ্যে ২০% শিশুর মৃত্যু হয় ভারতবর্ষে। যারা বেঁচে যায় তাদের পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা বধির জীবনযাপন করতে হয়। তাদের মস্তিস্ক ক্ষতিগ্রস্থও হয়। তাই এই টীকাকরনের উপর গুরুত্ব দিয়েই রবিবার থেকে খোয়াইতে শুরু হল এই বিশেষ টীকাকরন কর্মসূচী। একই দিনে আয়োজিত মিডিয়া ওয়ার্কশপে এই তথ্য তুলে ধরলেন জেলা স্বাস্থ্য আধিকারিক ড. পি.কে.দাস।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*