মা ও মেয়ের স্বামী একজন

বাংলাদেশ, ১১ জুলাই : মা ও মেয়ের স্বামী একজন! তা-ও এই বাংলাদেশে। এটা কি কখনো ভাবা যায়। অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বাংলাদেশের মান্দি উপজাতি গোষ্ঠীতে এমন বিয়ে প্রচলিত।
বর্তমানে এ বিষয়টি আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় বহুল প্রচারিত একটি খবর। সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সুপরিচিত ম্যাগাজিন ম্যারি ক্লেয়ারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের উত্তর-মধ্যমাঞ্চলের মান্দি উপজাতি গোষ্ঠীর বসবাস। এখানে বাস করছে ৩ সদস্যের একটি পরিবার আর এই পরিবারেই ঘটেছে মা ও মেয়ের এক স্বামী হওয়ার ঘটনা। মা’র নাম মিত্তামোনি। তিনি এখন ৫১ বছর বয়সী। তার মেয়ে ওরোলা ডালবোট। তার বয়স ৩০ বছর। এই মা ও মেয়ের একজনই স্বামী। তার নাম নোতেন।

এতে বলা হয়, ওরোলা ডালবোট কিছু বুঝতে শেখার আগেই তার জন্মদাতা পিতাকে হারান। তারপর তার মা মিত্তামোনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন। তার এ স্বামীর নাম নোতেন। তার আদরেই বড় হতে থাকে ওরোলা। নোতেন দেখতে শুনতে সুশ্রী তার মুখভরা হাসি। ওরালো যখন বড় হতে থাকেন তখন নোতেনকে দেখে ভাবতে থাকেন তার মা কত ভাগ্যবান। নোতেনের মতো সুদর্শন একজন স্বামী কল্পনা করতে থাকেন ওরালো। কিন্তু যখন তার মধ্যে বয়ঃসন্ধিক্ষণ আসে তখন অবাক হয়ে যান একটি তথ্য শুনে। তা হলো ওরালো শিশু থাকতেই তার মা যখন নোতেনকে বিয়ে করেছেন সেই একই অনুষ্ঠানে নোতেনের সঙ্গে ওরালোরও বিয়ে হয়ে গেছে। তখন ওরালোর বয়স ছিল মাত্র ৩ বছর। অর্থাৎ ওরালোও এখন নোতেনের স্ত্রী।

মান্দি উপজাতির প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী এখন মা ও মেয়ে দু’জনেই নোতেনের স্ত্রী। সে অবস্থায়ই তারা ঘর-সংসার করছেন। নোতেনের সঙ্গে নিজের বিয়ের খবর জানতে পেরে ওরোলা বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি বলেছেন, আমি একথা শোনার পর দৌড়ে পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। কিন্তু এ সময় তার মা মিত্তামোনি এগিয়ে আসেন। মেয়ের পাশে দাঁড়ান। তিনি তাকে বোঝান এটা তাদের জাতির প্রথা। তাকে নোতেনকে মেনে নিতেই হবে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, বাংলাদেশ ও ভারতে দুর্গম পাহাড়ি উপত্যকায় যেসব মান্দি উপজাতি বসবাস করে তাদের মধ্যে বিয়ের এমন রীতি প্রচলিত আছে। তাদের মধ্যে কোন নারী যদি বিধবা হন এবং তিনি ফের বিয়ে করতে চান তাহলে তাকে তার প্রয়াত স্বামীর কুল থেকে একজন পুরুষকে বেছে নিতে হয় স্বামী হিসেবে। কিন্তু মান্দিদের মধ্যে বেশীর ভাগ যুবকই একা আছেন অথবা বিয়ে করেন নি। ফলে তারা যদি কোন বিধবা বিয়ে করেন তাহলে তাকে নতুন এ স্বামীর জন্য ছাড় দিতে হয়। একই সঙ্গে তার কন্যাদের দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে কবুল করতে প্রস্তাব দেয়া হয়। বলা হয়, তার মেয়ে যখন পরিণত বয়সে পৌঁছবে তখন তার সঙ্গে সে দম্পতি হিসেবে দিনযাপন করবে। এমন প্রস্তাবে রাজি হয়ে গেলে ওই বিধবা ও তার কন্যার সঙ্গে একই অনুষ্ঠানে বিয়ে হয় একজন মাত্র পুরুষের। ওরোলা ও মিত্তামোনি এমনই এক বিয়ের মাধ্যমে নোতেনের স্ত্রী।

এ বিষয়ে ওরোলা জানান, আমার জন্মদাতা পিতা যখন মারা যান তখন মা’র বয়স ছিল মাত্র ২৫ বছর। তিনি একাকী বাকি জীবন কাটানোর জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। তখন আমাদের মান্দি উপজাতির প্রথা অনুযায়ী মাকে বিয়ে করতে নোতেনকে প্রস্তাব করা হয়। তখন নোতেনের বয়স ছিল মাত্র ১৭। তবে বিয়েতে শর্ত দেয়া হয়, একই সঙ্গে ওরোলাকেও বিয়ে করতে হবে। সে মতে তাদের বিয়ে হয়ে গেছে।

ওরোলা বলেন, আমি তখন এত ছোট ছিলাম যে, বিয়ের কথাটি আমার মনেই নেই। কিভাবে কি হয়েছিল আমি বলতেই পারবো না।

এদিকে নোতেনের সঙ্গে মিত্তামোনি দু’সন্তানের মা হয়েছেন। তাই কখনও কখনও ওরোলা একান্তে নিজের করে একজন স্বামীর কথা চিন্তা করেন। কিন্তু তিনি তা ভাবনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন।

FacebookTwitterGoogle+Share