আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। মেরিল্যান্ড অ্যানাপোলিসের হোটেল ওয়েস্টিনে শুক্রবার বিকেলে স্নায়বিক এবং অর্থোপেডিক সার্জনস্ আমেরিকান একাডেমীর এক সভায় ড. সার্জিও ক্যানাবোরো প্রথম মানব মস্তিস্ক প্রতিস্থাপনের জন্য তার সহযোগী হিসেবে নিউরোসার্জনদের আহ্বান জানান।
প্রতিনিয়ত উন্নতির সীমাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে মানবসভ্যতা। আর এই উন্নতিকে ত্বরান্বিত করতে নবায়ন হচ্ছে বিজ্ঞানবিশ্ব। একটা সময় শল্যচিকিৎসার মাধ্যমে মানুষের চোখের কর্নিয়া কিংবা কিডনি প্রতিস্থাপন ছিল কল্পনার অতীত। আর এখন কিনা মানুষের মস্তিষ্কও প্রতিস্থাপিত হতে যাচ্ছে। মানবজাতির এ কৃতিত্ব অর্জন করতে আর মাত্র দুই বছর অপেক্ষা করতে হবে। ২০১৭ সালেই মানবমস্তিষ্ক প্রতিস্থাপন করতে যাচ্ছেন চিকিৎসকরা।
ইতালির নিউরোসার্জন সার্জিও ক্যানাভেরোর এক ঘোষণায় জানান, আগামী ২৪ মাসের মধ্যে বিশ্বে প্রথমবারের মত মানব মস্তিস্কের প্রতিস্থাপন করা হবে এবং তিনি এই যুগান্তকারী সার্জারীকে ‘হেড অ্যানাটোমোসিস ভেঞ্চার’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালের ডিসেম্বর নাগাদ তিনি মানব মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনে অস্ত্রপচারের পরিকল্পনা করেছেন। এক্ষেত্রে অস্ত্রপচারে সফল হওয়ার সম্ভাবনা ৯০ শতাংশ।
মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনে বিশ্বের প্রথম রোগী হিসেবে ছুরি-চাকুর নিচে যাবেন ৩০ বছর বয়সী রাশিয়ান নাগরিক ভ্যালারি স্পিরিদনোফ। তিনি পেশী-ক্ষয়জনিত রোগে ভুগছেন। ঘোষণার সময় ক্যানাভেরা বলেন, ‘আমি অস্বীকার করছি না, এই কাজে ঝুঁকি আছে। সফলতার বিষয়ে অনেকাংশেই নিশ্চিত হয়েই আমি ঘোষণাটা দিয়েছি।’
ক্যানাভেরার রোগী রুশ স্পিরিদনোফ সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই অস্ত্রোপচার সফল হলে সীমাবদ্ধতাগুলো থেকে আমার মুক্তি মিলবে। আমি আরো স্বাধীন হতে পারবো এবং আমার জীবন আরো সুন্দর হয়ে উঠবে। স্পিরিদনোফ আরো বলেন, ‘আমরা বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রায় অনেক বড় একটা পদক্ষেপ নিতে চলেছি। আমার বিশ্বাস, সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই সম্পন্ন হবে।’
ইন্টারন্যাশনাল কলেজ অব সার্জনস’র সাবেক প্রেসিডেন্ট কার্ডিওথোরাসিক সার্জন রেমন্ড দিয়েতার সার্জিও ক্যানাভেরার ঘোষণা আসার পরপরই বলেন, ‘এই অস্ত্রপচারে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হল, প্রতিস্থাপনের সময় মস্তিষ্ককে জীবিত রাখা।’
তিনি বলেন, ‘সার্জিও ক্যানাভেরার বিষয়টি সমালোচিত হচ্ছে বলে আমি জানতে পেরেছি। ভুলে গেলে চলবে না, প্রথম যখন হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন করা হয় তখনো সমালোচনা হয়েছিল।’
সার্জিও ক্যানাভেরা জানিয়েছেন, মস্তিষ্ক প্রতিস্থাপনে অস্ত্রপচারটি যুক্তরাষ্ট্র অথবা চীনে সম্পন্ন করা হবে। শতাধিক চিকিৎসাকর্মী এতে অংশ নেবেন। প্রতিস্থাপন সম্পন্ন হতে ৩৬ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। তিনি বলেন, ‘আমি বৈজ্ঞানিকভাবেই শুধু নয়, মানসিকভাবেও নিজেকে প্রস্তুত করেছি। এ ধরনের একটি অভিযানে মানসিক জোরও সমান গুরুত্বপূর্ণ।’ সূত্র : দি গার্ডিয়ান