পর্যটন দপ্তরকে কালিমালিপ্ত করতে নারকেল কুঞ্জ এখন কামধেনুতে পরিণত করে চলেছে একাংশ সমাজদ্রোহী যুবক

সুব্রত দাস, গন্ডাছড়া, ৩১ ডিসেম্বর || ত্রিপুরা রাজ্যের পর্যটন দপ্তরকে কালিমালিপ্ত করতে রাজ্যের বৃহত্তর জলাধার ডুম্বুর জলাশয়ের মধ্যমনি নারকেল কুঞ্জ এখন কামধেনুতে পরিণত করে চলেছে সংশ্লিষ্ট নারকেল কুঞ্জের একাংশ সমাজদ্রোহী যুবক। পর্যটকদের দেখলেই ঐ সমস্ত মদমত্ত যুবকদের মাথা গরম হয়ে উঠে এবং কি করে পর্যটকদের পকেট কাটা যায় সেই ফন্দি আঁটে। নারকেল কুঞ্জে আসা পর্যটকদের কাছ থেকে কি করে বেঘোরে টাকা পয়সা সহজে হাতিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তার ধান্দায় একাংশ যুবক থাকলেও কেউ তাদের প্রতিকারে এগিয়ে আসছে না প্রশাসন।
একটি বিশেষ সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমান শীত মরশুমে নারকেল কুঞ্জে পর্যটকদের কাছ থেকে জুলুমবাজি করে আদায় করা বিপুল পরিমানের অর্থের ভাগ বাটোয়ারা সমান ভাগে ভাগ করে নিচ্ছে গন্ডাছড়া মহকুমা শাসক অফিসের এবং মৎস্য অফিসের একাংশ কর্মী। কিন্ত পুরো সত্য ঘটনা ধরা পড়ে মঙ্গলবার। এদিন দুপুর নাগাদ গন্ডাছড়া মহকুমার স্থানীয় কয়েকজন সংবাদ কর্মী সহ বহিরাগত সাংবাদিকরা নারকেল কুঞ্জে যান। পার্কিং স্থানে গাড়ী রেখে সাংবাদিকরা সামনের দিকে পায়ে হেঁটে রওনা হন। সদ্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহার হাত ধরে উদ্বোধন হওয়া বাইশ কোটি টাকায় নির্মিত ঝুলন্ত সেতুটির উপর দিয়ে লোক চলাচলে নিষিদ্ধ করেছে স্থানীয় প্রশাসন।উল্লেখ্য, গত ৩রা ডিসেম্বর নারকেল কুঞ্জের বাইশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজের অনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা। অভিযোগ উদ্বোধনের দুই ঘন্টা পরই ঐ বাইশ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ঝুলন্ত ব্রিজটি নড়বড়ে হয়ে পড়ে। এতে বহু লোকজন সহ খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী এবং পর্যটন মন্ত্রী আটকা পড়ে যান। এদিন থেকে এখন পর্যন্ত ঐ ঝুলন্ত ব্রিজটি নড়বড়ে হয়ে থাকায় ব্রিজের উপর দিয়ে লোক চলাচলে বিধিনিষেধ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ফলে মূল নারকেল কুঞ্জে যাবার জন্য মৎস্য দপ্তরের কেস কালচার দিয়ে একটি তিন ফুট পাশের একটি ভাসমান ব্রিজ তৈরী করে দেওয়া হয়। সাংবাদিকরা যখন ঐ ভাসমান ব্রিজে উঠেন তখন তিনজন মদ্যপ যুবক সাংবাদিকদের পথ আটকিয়ে ঐ ব্রিজ যাওয়ার জন্য মাথা পিছু কুড়ি টাকা করে দাবী করেন। তা নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে ব্যাপক তর্ক যুদ্ধ হয়। যদিও নারকেল কুঞ্জটি যে একটি কামধেনুতে পরিণত হয়েছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বহু পর্যটক ক্ষোভের সঙ্গে বলছেন, নারকেল কুঞ্জ নামক এই পর্যটন কেন্দ্রটি একটি মগেরমুলুকের স্থানে পরিণত হয়েছে। নারকেল কুঞ্জে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গেই আপনার জলের প্রয়োজন, হ্যাঁ পেয়ে যাবেন পাঁচশো গ্রাম জলের বোতল কিনতে হবে কুড়ি টাকায়। নৌকায় উঠবেন, গুনতে হবে আড়াই হাজার টাকা। জলাশয়ের কিনারে দাঁড়িয়ে একটি সেলফি তুলবেন দিতে হবে কুড়ি টাকা। হোটেলে খাবেন ৮০ টাকার মাছ ভাত আপনাকে খেতে হবে দেড়শো টাকায়। সব মিলিয়ে সাধের নারকেল কুঞ্জ এখন কামধেনু গাভীতে পরিণত করে চলেছে সংশ্লিষ্ট এলাকার একাংশ যুবক।
যাইহোক সাংবাদিকদের সঙ্গে পশুর আচরণের সংবাদ ক্ষনিকের মধ্যে পৌঁছে যায় পর্যটন দপ্তরে। খবর পৌঁছে ধলাই জেলা শাসকের নিকট। সাধারণ মানুষ এবং সাংবাদিকদের সঙ্গে গরুর মতো আচরণের সত্যতা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতে জেলা শাসক নির্দেশ পাঠান গন্ডাছড়া মহকুমা শাসককে। মহকুমা শাসক সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনার সত্যতা জানতে ঘটনাস্থলে পাঠান ডিসিএম দিলীপ দেব্বর্মাকে। ডিসিএম দিলীপ দেব্বর্মা ঘটনাস্থলে পৌঁছেই ঘটনার সত্যতা খুঁজে পেয়ে সব কয়টি প্রতারককে নারকেল কুঞ্জ থেকে সরিয়ে দেন। বিশেষ সূত্রে সংবাদ, প্রতিদিন উক্ত নারকেল কুঞ্জে বেঘোরে সাধারণ মানুষের পকেট কেটে লক্ষ লক্ষ টাকা উপার্জন করা টাকা থেকে গন্ডাছড়া মহকুমা শাসকের অফিস এবং মৎস্য দপ্তরের একাংশ কর্মী বেশ মোটা অংকের পার্সেন্ট পাচ্ছে বলে অভিযোগ। সাধারণ মানুষের অভিযোগ রাজ্যের পর্যটন মন্ত্রীকে এবং দপ্তরকে কালিমা লিপ্ত করতে নারকেল কুঞ্জে একাংশ অসভ্য সক্রিয়। তাদের বিরুদ্ধে সহসাই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*