তিন দফা দাবিতে যুব পদযাত্রা, যৌবনের দৃপ্ত পদভারে আন্দোলিত খোয়াই

গোপাল সিং, খোয়াই, ০৬ জানুয়ারি || তিন দফা দাবির ভিত্তিতে সোমবার ডি ওয়াই এফ আই ও টি ওয়াই এফ’র যুব পদযাত্রাকে ঘিরে গর্বোদ্যত যৌবনের দৃপ্ত পদভারে আবারো আরেকবার আন্দোলিত হলো রাজ্যের উত্তর প্রান্তের ছোট্ট জেলা শহর খোয়াই। পদযাত্রা শেষে উদ্দীপ্ত যুব জমায়েত থেকে বজ্র নির্ঘোষ কন্ঠে আরো একবার উচ্চারিত হলো আগামীর লড়াই সংগ্রামের বার্তা।পদযাত্রার সংগ্রামী মেজাজ আর গর্বিত যৌবনের তেজী মনোভাব দেখে জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নেতৃবৃন্দও আহ্বান জানালেন, সংগ্রামের রাজপথ ছাড়বেন না। দাবী আদায়ের সম্মিলিত শ্লোগানে শ্লোগানে জনবিরোধী নীতির অভিমুখ পাল্টাতে বাধ্য করুন বধির প্রশাসনের সরকারকে।আরো ব্যাপক মানুষকে সংগঠিত করে সামিল করুন আগামীদিনের লড়াই সংগ্রামের ময়দানে।
বেকার যুবদের কাজ, কর্মসংস্থান, গণতন্ত্র পুণরুদ্বার ও আইনের শাসন পুণঃপ্রতিষ্ঠা ও নেশার বিরুদ্ধে বৃহত্তর যুব সমাজকে গর্জে উঠার আহ্বান জানিয়ে সারা রাজ্য জুড়ে গত মাসাধিককাল ধরে চলছে ডি ওয়াই এফ আই ও টি ওয়াই এফ’র ডাকে যুব পদযাত্রা। আর রাজ্যব্যাপী এই আন্দোলন কর্মসূচীর অঙ্গ হিসেবে সোমবার খোয়াই জেলা সদরেও পথে নামে আগামীর শপথে দৃপ্ত আত্মপ্রত্যয়ী আগুয়ান যৌবন। চড়া রোদ যেন এদিন অনেকটাই গ্রীষ্মের মতো ব্যতিক্রমী আবহাওয়ার আভাস ছড়াচ্ছিল পৌষের শীতের দুপুরে। তবুও এদিন খোয়াই জেলা শহরের রাজপথ দখল করে বাঁধনহারা যৌবনের দূত। দৃপ্ত পদভারে প্রকম্পিত হলো সারা খোয়াই শহর। এক ঘন্টারও অধিক সময় ধরে কয়েক কিলোমিটার পথ চলা পদযাত্রা থেকে গর্ব আর অহঙ্কারের প্রতীক উদ্দীপ্ত যৌবন জানান দেয়, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া যৌবন পিছু হটবে না। সম্মিলিত প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের মধ্য দিয়েই শত্রুর সন্ত্রাসী আক্রমণ মোকাবিলা করেই সমুখপানে এগিয়ে যাবে আগুয়ান যৌবন। কাজ কর্মসংস্থানের দাবী আদায় সহ নেশার বিরুদ্ধে সম্মিলিত গর্জন আর গণতন্ত্র পুণরুদ্বার ও আইনের শাসন পুণঃপ্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্য্যন্ত প্রত্যয়ী যৌবন ঘরে ফিরবে না।
এদিন বেলা বারোটায় জেলা শহরের কবিগুরু পার্কের রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশ থেকে শুরু হয় উদ্দীপ্ত পদযাত্রা। তার আগে মহকুমার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে জাতি উপজাতির কয়েকশত যুবক যুবতী এসে জড়ো হয় রবীন্দ্র মূর্তির পাদদেশে। পদযাত্রার একবারে অগ্রভাগে মূল ব্যানার।মিছিলের পুরোটা জুড়েই ছিল দুটি যুব সংগঠনের সাদা সবুজ পতাকার সমাহার। থার্মোকলের থালায় লেখা যুব সংগঠন দুটির নাম লেখা ডিসপ্লে। আর ছিল বেলুনের সমারোহ। সামনে ছিলেন রাজ্য ও বিভাগের যুব নেতৃবৃন্দ। এদের সাথে একইসাথে পদযাত্রায় সামিল ছিলেন পদ্ম কুমার দেববর্মা, নির্মল বিশ্বাস, মনোজ দাস, সুশান্ত দেববর্মা ও কানন দত্তের মতো প্রাক্তন যুবনেতারাও। পায়ে পায়ে এগিয়ে চলে যৌবনের দিশারীরা। একে একে বনকর, শ্রী অরবিন্দ পার্ক, গয়াপ্রসাদ পার্ক, থানা কর্ণার ও শহীদ ক্ষুদিরাম বসু সরণী পার হয়ে পদযাত্রা একসময় মহারাজগঞ্জ বাজার, দূর্গানগর অতিক্রম করে লালছড়ার ওপর দিয়ে গিয়ে জননেতা নৃপেন চক্রবর্তী অ্যাভেনিউ দিয়ে জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্র সুভাষপার্কের কোহিনূর শপিং কমপ্লেক্সের সামনে নেতাজী মূর্তির পাদদেশে এসে জমায়েতে মিলিত হয়।
ডি ওয়াই এফ আই’র বিভাগীয় সভানেত্রী মল্লিকা শীল ও টি ওয়াই এফ’র বিভাগীয় সভাপতি বীরেশ দেববর্মাকে নিয়ে সভাপতিমণ্ডলী গঠন করে একসময় জমায়েতের কাজ শুরু হলে বক্তব্য রাখেন ডি ওয়াই এফ আই’র রাজ্য সম্পাদক নবারুণ দেব, রাজ্য সভাপতি পলাশ ভৌমিক, টি ওয়াই এফ’র রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নেতাজী দেববর্মা ও ডি ওয়াই এফ’র বিভাগীয় সম্পাদক গৌতম পাল।
জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নবারুণ দেব বলেন, ত্রিদলীয় জোট সরকারের সুশাসনের জমানায় শুধু যুবরা নয়।আক্রান্ত সব দলমতের, সব পেশার মানুষ। নারী পুরুষ সবাই আক্রান্ত। গরীব মানুষের জীবন জীবিকা আক্রান্ত। শারীরিকভাবেও আক্রমণের শিকার বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ।এখন শাসকদলের লোকেরাই শাসকদলের পোষা মস্তান বাহিনীর হাতে আক্রান্ত। দুর্নীতি সর্বস্তরে।নেশার রমরমা। এর থেকে তোল্লা তুলে শাসকদলের নেতাদের একাংশ। কর্মসংস্থান নেই।পাড়ায় পাড়ায় মদের দোকান খুলছে। বিরোধীদলীয় লোকজন আক্রান্ত। এর বিরুদ্ধে দলমতের পার্থক্য ভুলে সোচ্চার হোন। ভবিষ্যতের প্রজন্মকে বাঁচান।
জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে পলাশ ভৌমিক বলেন, বিজেপি’র দুঃশাসনে রাজ্য ও দেশ আজ আক্রান্ত। অধিকার আক্রান্ত। যুবদের কাজের অধিকার আক্রান্ত। মোদি নিজেকে ছাপ্পান্ন ইঞ্চি ছাতির লৌহপুরুষ বলে দাবী করে দেশের মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। আচ্ছে দিনের কথা বলে ক্ষমতার মসনদ দখল করে দেশের মানুষকে প্রতারণা করছে। বছরে দুই কোটি বেকারের চাকুরির প্রতিশ্রুতি আজ হিমঘরে। বিশ্বের মধ্যে এদেশে আজ সর্বাধিক বেকার। মিসকলে চাকুরির প্রতিশ্রুতির কী হলো! আজকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত যুবরাও বেকার। হাজার হাজার শূন্যপদ পড়ে আছে। সেগুলো অবলুপ্ত করে দেওয়া হচ্ছে। কাজের দাবী ছিনিয়ে আনতে আজ আমাদের পথে নামতে হচ্ছে। এই আন্দোলনের গতিধারাকে আরো বেগবান করতে হবে।
জমায়েতে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নেতাজী দেববর্মা বলেন, বিজেপি’র নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বেকারী বিরোধী নয়। ওরা বেকার বিরোধী। ওরা বেকারের কর্মসংস্থান চায়না। ওরা নেশার সাগরে যুবসমাজকে ভাসিয়ে দিয়ে তার বেকারত্বের সমস্যা ভুলিয়ে দিতে চায়। গণতন্ত্র এদের জমানায় পদদলিত। রুজি রোজগার নেই গরীব মানুষের।সবকিছু বেসরকারীকরণ করে দিচ্ছে। এখন তো ডাবল ইঞ্জিন নয়। দস্তুরমতো ট্রিপল ইঞ্জিনের সরকার চলছে এই রাজ্যে। এডিসি’তে দুর্নীতির স্বর্গরাজ্য কায়েম করেছে মথা। শাসকের দর্প চূর্ণ করে দিতে আগামীদিন আরো দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে আমাদের।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*