গোপাল সিং, খোয়াই, ০৭ অক্টোবর || নেশায় ডুবছে ত্রিপুরা নাকি নেশার কোরিডোর হচ্ছে ত্রিপুরা? জনগণের মতে এত কোটি কোটি টাকার নেশা ও মাদকে মজে নেই ত্রিপুরাবাসী। ত্রিপুরাকে বদনামের ভাগিদার করে নেশার কোরিডোর করে সীমান্ত-ওপার পাচার বাণিজ্য তুঙ্গে উঠেছে। ম্যানেজমেন্টের কৃপায় বিএসএফও খুশি।
এরমধ্যেই ত্রিপুরা জুড়ে এখন তোলপাড় — প্রায় ৭০ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য উদ্ধার নিয়ে উঠেছে নানা প্রশ্ন। ঘটনাটি ঘিরে তৈরি হয়েছে বিভ্রান্তি ও বিতর্ক, কারণ একই মাদক ভিন্ন ভিন্ন স্থানে উদ্ধার দেখিয়ে আসাম রাইফেলস, বিএসএফ ও শুল্ক দফতরের যৌথ অভিযান হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যেখানে মূল ভূমিকা ছিল বলে দাবি করছে ত্রিপুরা পুলিশ। ফলে, প্রশাসনিক পরিসরে “সাফল্যের দাবিদার কে?” — তা নিয়ে চলছে তীব্র আলোচনার ঝড়।
প্রশ্নটা শুরু হয় এখান থেকেই — চুড়াইবাড়ি চেকপোস্ট পার হয়ে এত বিপুল পরিমাণ মাদক ত্রিপুরায় প্রবেশ করলো কীভাবে? যদি সীমানা পাহারায় নিয়োজিত নিরাপত্তা বাহিনী এতটাই সক্রিয় থাকে, তবে সিমেন্টবোঝাই ট্রাকের আড়ালে এই বিশাল চালান কীভাবে অদেখা থেকে গেল? স্থানীয়দের দাবি, রাঘব-বোয়ালদের মদতেই এমন পাচার সম্ভব হয়েছে, এবং এই ঘটনার পেছনে “ম্যানেজমেন্ট” চলেছে বড় পরিসরে।
সূত্রমতে, প্রথমে ওই মাদক মোহনপুরে ধরা পড়ে, পরে খোয়াই সিঙ্গিছড়ায় ত্রিপুরা পুলিশের হাতে আটক হয়। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয়, পরবর্তীতে সেই একই মাদককে আসাম রাইফেলস ও শুল্ক দফতর নিজেদের সফল অভিযান হিসেবে প্রচার করে। মিডিয়ায় সেই খবর ছড়িয়ে পড়তেই প্রশ্ন তুলছে সাধারণ মানুষ— “সাফল্যটা কার? পুলিশের, না কি কাস্টমস-আসাম রাইফেলসের? নাকি সবটাই কৃত্রিম সাফল্যের নাটক?”
বিভিন্ন মহলের ধারণা, অভ্যন্তরীণ লেনদেন বা সমন্বয়ের ঘাটতি থেকেই এই বিভ্রান্তি। একই মাদক উদ্ধারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংস্থা নিজেদের কৃতিত্ব দেখানোর চেষ্টায় যেন রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নেমেছে। এমনকি, খোয়াই পুলিশ কর্তৃক উদ্ধার করা মাদককে পরবর্তীতে অন্যান্য স্থানে ‘পুনরুদ্ধার’ দেখানো হয়েছে, যা জনমনে সন্দেহ আরও গভীর করেছে।
খোয়াই জেলার ঘটনাস্থলের ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে, যা স্পষ্টভাবে দেখাচ্ছে — উদ্ধারের প্রথম সাফল্য ছিল ত্রিপুরা পুলিশের। কিন্তু পরবর্তীতে মাদকটি “হাতবদল” হয়ে আসাম রাইফেলস ও কাস্টমসের সাফল্য হিসেবে প্রকাশ পায়। জনগণের ভাষায়, “ঘুমন্ত অবস্থায় ত্রিপুরা পুলিশের হাত থেকে কিডন্যাপ করা হলো সাফল্যটাই!”
জনমতের আরেকটি বড় প্রশ্ন — প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার মাদক কীভাবে রাজ্যে প্রবেশ করছে? চুড়াইবাড়ি, ধর্মনগর, কুমারঘাট, আমবাসা ও কমলপুর হয়ে এত বড় চালান ঢুকে পড়া মানে কি কাউকে ম্যানেজ করা হয়েছে? অনেকেই বলছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্যান্য রাজ্যের সীমানা পেরিয়ে আসা এই চালান উচ্চপর্যায়ের যোগসাজশ ছাড়া সম্ভব নয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় তুমুল আলোচনা — বাংলাদেশ সীমান্তেও প্রায় প্রতিদিনই বিজিবি মাদক আটক করছে, যা ত্রিপুরা দিক থেকেই পাচার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়দের মতে, খোয়াই হয়ে উঠেছে পাচারের কোরিডর, আর বিএসএফের মদতপ বা “ম্যানেজমেন্ট”-এর জোরে এই পাচার চলছে নিয়মিত।
মাদকবিরোধী অভিযানে ত্রিপুরা সরকার বিগত কয়েক বছরে অনেক উদ্যোগ নিলেও, সাধারণ মানুষের বক্তব্য — “চুনোপুটি” ধরা পড়ছে, কিন্তু রাঘব-বোয়ালরা থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আইনি ফাঁকফোকর ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় ব্যবসা চলছে আগের মতোই। জনমনে তাই চাওয়া একটাই — “ত্রিপুরার বুকে যারা সমাজটাকে বিষিয়ে তুলছে, তাদের বিরুদ্ধে একবার সত্যিকারের সাফল্য দেখতে চায় মানুষ।”
