তিন দিনব্যাপী খোয়াই জেলা ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা-২০১৬’র সূচনা

bookগোপাল সিং, খোয়াই, ১৭ ডিসেম্বর ৷৷ খোয়াই সরকারী দ্বাদশ শ্রেনী বিদ্যালয়ে শনিবার থেকে শুরু হল তিন দিনব্যাপী খোয়াই জেলা ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা ২০১৬। শনিবার এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞান মেলার সূচনা করেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দত্ত। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি ও সহ সভাধিপতি যথাক্রমে সাইনি সরকার এবং বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য্য, খোয়াই পুর পরিষদের এডুকেশন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান কঙ্কন পুরকায়স্থ, মহকুমা শাসক প্রসূন দে, জেলা শিক্ষা আধিকারিক কৃষ্ণধন দেববর্মা, খোয়াই সরকারী দ্বাদশ শ্রেনী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তথা জেলা বিজ্ঞান মেলা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রদীপ দাস প্রমুখরা। এছাড়াও বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ছাত্র-ছাত্রী ও অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন। এবছর বিজ্ঞান মেলার প্রতিপাদ্য বিষয় হল ‘সায়েন্স, টেকনলজি এন্ড মেথমেটিক্স ফর ন্যাশন বিল্ডিং’। এবছর জেলা ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলায় জেলার বিভিন্ন স্কুল থেকে মোট ৫২টি মডেল এসেছে। ১৭ই ডিসেম্বর থেকে ১৯শে ডিসেম্বর, এই তিন দিনব্যাপী বিজ্ঞান মেলার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষন রাখেন খোয়াই পুর পরিষদের এডুকেশন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারম্যান তথা অবসর প্রাপ্ত শিক্ষক কঙ্কন পুরকায়স্থ। তিনি বলেন, অল্প সময়ের মধ্যে হলেও যেহেতু প্রতিটি বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান শিক্ষক রয়েছেন সুতরাং আরও বিজ্ঞান বিষয়ক মডেল তিনি আশা করেছিলেন। এসবি স্কুলগুলিকে বাদ দিলেও ৯২টি স্কুল থেকে ৮০টি মডেল আসার কথা ছিল। আগ্রহ, ঐকান্তিকতা এবং প্রবল মনের ইচ্ছা যদি থাকত তবে মডেলের সংখ্যা আরও বাড়ত বলেই মত প্রকাশ করেন তিনি। সেই সাথে কুসংস্কারমুক্ত সমাজ গড়ার জন্য আগামী প্রজন্মকে বিজ্ঞানমনস্ক করার ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অগ্রগনি ভূমিকা গ্রহন করার আবেদন জানান কঙ্কন পুরকায়স্থ। সেই সাথে নীল জলের বোতল ঝুলানোর বিষয়টি নিয়েও সরব হন তিনি। বর্তমানে গুঁজব রয়েছে নীল জলের বোতল গেইটে ঝুলিয়ে রাখলে কোন ভূত-প্রেত বা আত্মা বাড়ীতে প্রবেশ করে না। জিন চালান জাতীয় গুঁজব ছড়ানো হয়েছে। অথচ যাদের বাড়ীর গেইটে এই নীল জলের বোতল টাঙানো আছে তাদের বাড়ীতে ঢুকলে দেখা যাবে ইন্টারনেট সহ জিও মোবাইল সবই রয়েছে। বিজ্ঞান সম্মত আধুনিক যুগের সমস্ত সাধন ঘরে থাকা সত্বেও তারা কুসংস্কারের বশবর্তী হচ্ছেন, গুঁজবে কান দিচ্ছেন।
অপরদিকে মহকুমা শাসক প্রসূন দে বলেন, একসময় মহকুমা ভিত্তিক নয়, রাজ্য ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা হতো। কিন্তু সরকারী উদ্যোগে এখন বিজ্ঞান মেলাকে প্রত্যেকটা জেলাতে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ভারতের সংবিধানে ৫১(এ) অনুচ্ছেদে বিশেষভাবে দাবি রাখে যে দেশের প্রত্যেকটা জনগন এই রকম আচরন করবে যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান মানসিকতা বিশেষভাবে প্রষ্ফুটিত হবে। এইরকম আচরন করবে যার মাধ্যমে নাকি অন্য কাউকেও বিজ্ঞান মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ করে দেওয়া যায়। কিন্তু তারপরও কলকাতা থেকে আগরতলা এবং এখন খোয়াইতেও গুঁজব ও কুসংষ্কারে ভরা নীল জলের বোতল ঝুলানোর হিড়িক পড়তে দেখা যাচ্ছে তাদের বাড়ীতে যাদের হাতে হাতে স্মার্ট ফোন শোভা পায় এবং ইন্টারন্যাট সার্ফ অনবরত করেন তারা। এর কারন হিসাবে বিজ্ঞান পড়ার পাশাপাশি তার মৌলিক উপপাদ্যটাকে আয়ত্ত না করাকেই দায়ি করেন মহকুমা শাসক প্রসূন দে।
এরপর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দত্ত উনার আলোচনাক্রমে বিজ্ঞান মডেল নিয়ে আসা ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, কুসংস্কার শত শত বছর আগেও ছিল, তখন বিজ্ঞান মনস্ক মানুষও ছিলেন। তিনি এরিষ্টটল এর সময়কার কথা তুলে ধরে সে যুগে উনার বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তা-চেতনা যে উপেক্ষিত হয়েছিল তা তিনি তুলে ধরেন। সে সময় কেউ বিশ্বাস করেনি পৃথিবী গোল। কিন্তু আজ আমরা বিশ্বাস করি পৃথিবী গোল। কারন বিজ্ঞান প্রমান করেছে, এটা প্রমানিত হয়েছে পৃথিবী গোল। সেই সাথে কুসংস্কার নিয়ে পূর্ববর্তী বক্তাদের আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, শুধু কুসংস্কার বললেই চলবে না, তা প্রমানিত করে দেখাতে হবে যে সেটা কুসংষ্কার। শুধু বললেই চলবে না এটাতে দেহের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি। প্রমান করতে হবে। এটাই বিজ্ঞান, এটাই সায়েন্স। সেই সাথে যে ৫২টি স্কুল থেকে খুদে ছাত্র-ছাত্রীরা বিজ্ঞান ভিত্তিক মডেল নিয়ে এসেছে তাদের উৎসাহ প্রদান করেন। বললেন এই ৫২ জন আগামী দিনে শিক্ষাক্ষেত্রে বৃহত্তর পদক্ষেপ নিতে তার এই বিজ্ঞান মনস্কতাই তাকে সাহায্য করবে। সেই সাথে তিনি বলেন, এই বিজ্ঞান বিষয়ক মেলা বা দৃষ্টিভঙিকে স্কুল, কলেজ স্তরে যেমন আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে তেমনি গ্রামে, বস্তিতে ছড়িয়ে দিতে হবে।
শেষে খোয়াই জিলা পরিষদের সহ সভাধিপতি বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য্য বলেন, এই সময়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা থাকায় বিজ্ঞান মেলার প্রস্তুতি নিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। রাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা যেহেতু ২১ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে তাই স্বাভাবিকভাবেই জেলা ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা এর আগে সম্পন্ন করতে গিয়ে ১৭ তারিখটিকে বাছাই করতে হয়েছে। তাই সকল ছাত্র-ছাত্রীরা সম পরিমান সুযোগ পায়নি। তাছাড়া বর্তমান প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বিজ্ঞান একদিকে নতুন নতুন প্রযুক্তি সৃষ্টি করবে। এই নতুন প্রযুক্তিকে প্রতিটা মানুষের কাছে সঠিকভাবে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটাও আমাদের নিতে হবে। নতুবা বিজ্ঞানের আবিস্কার সবার জন্য না, মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হয়ে যাবে। একই সাথে খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি সাইনি সরকার সকল ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান মনস্ক হবার জন্য অনুপ্রাণিত করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ফিতা কেটে বিজ্ঞান মেলার স্টলগুলি সবার জন্য উন্মুক্ত করেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দত্ত। এরপর সমস্ত অতিথিরা সবগুলি স্টল ঘুরে দেখেন। বিজ্ঞান মেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে চরম উচ্ছাস লক্ষ্য করা যায় এদিন। তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান মেলার সমাপ্তি হবে ১৯শে ডিসেম্বর। তবে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর বিজ্ঞান মেলা হয় এবং ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতির অভাবকে দায়ি করে বিভিন্ন বক্তারা মঞ্চে আলোচনা করেন। কিন্তু প্রতি বছরই নিয়ম করে সম সংখ্যক স্কুলই বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহন করে। এবং যে ছাত্র-ছাত্রীরা বিজ্ঞান বিষয়ক মডেল নিয়ে আসে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় একখানা স্ক্রিপ্ট। যে স্কিপ্ট দেখে তারা তাদের মডেলকে ব্যাক্ষা করে। এতে করে খুদে ছাত্র-ছাত্রীরা কি আদৌ বিজ্ঞান বা মডেল সম্পর্কে অবহিত হচ্ছে? প্রশ্ন অভিভাকদের।
FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*