
অপরদিকে মহকুমা শাসক প্রসূন দে বলেন, একসময় মহকুমা ভিত্তিক নয়, রাজ্য ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা হতো। কিন্তু সরকারী উদ্যোগে এখন বিজ্ঞান মেলাকে প্রত্যেকটা জেলাতে ছড়িয়ে দেওয়ার মতো প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। ভারতের সংবিধানে ৫১(এ) অনুচ্ছেদে বিশেষভাবে দাবি রাখে যে দেশের প্রত্যেকটা জনগন এই রকম আচরন করবে যার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে বিজ্ঞান মানসিকতা বিশেষভাবে প্রষ্ফুটিত হবে। এইরকম আচরন করবে যার মাধ্যমে নাকি অন্য কাউকেও বিজ্ঞান মানসিকতায় উদ্বুদ্ধ করে দেওয়া যায়। কিন্তু তারপরও কলকাতা থেকে আগরতলা এবং এখন খোয়াইতেও গুঁজব ও কুসংষ্কারে ভরা নীল জলের বোতল ঝুলানোর হিড়িক পড়তে দেখা যাচ্ছে তাদের বাড়ীতে যাদের হাতে হাতে স্মার্ট ফোন শোভা পায় এবং ইন্টারন্যাট সার্ফ অনবরত করেন তারা। এর কারন হিসাবে বিজ্ঞান পড়ার পাশাপাশি তার মৌলিক উপপাদ্যটাকে আয়ত্ত না করাকেই দায়ি করেন মহকুমা শাসক প্রসূন দে।
এরপর বিধায়ক বিশ্বজিৎ দত্ত উনার আলোচনাক্রমে বিজ্ঞান মডেল নিয়ে আসা ছাত্র-ছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, কুসংস্কার শত শত বছর আগেও ছিল, তখন বিজ্ঞান মনস্ক মানুষও ছিলেন। তিনি এরিষ্টটল এর সময়কার কথা তুলে ধরে সে যুগে উনার বিজ্ঞান মনস্ক চিন্তা-চেতনা যে উপেক্ষিত হয়েছিল তা তিনি তুলে ধরেন। সে সময় কেউ বিশ্বাস করেনি পৃথিবী গোল। কিন্তু আজ আমরা বিশ্বাস করি পৃথিবী গোল। কারন বিজ্ঞান প্রমান করেছে, এটা প্রমানিত হয়েছে পৃথিবী গোল। সেই সাথে কুসংস্কার নিয়ে পূর্ববর্তী বক্তাদের আলোচনা প্রসঙ্গে বলেন, শুধু কুসংস্কার বললেই চলবে না, তা প্রমানিত করে দেখাতে হবে যে সেটা কুসংষ্কার। শুধু বললেই চলবে না এটাতে দেহের ক্ষতি, সমাজের ক্ষতি। প্রমান করতে হবে। এটাই বিজ্ঞান, এটাই সায়েন্স। সেই সাথে যে ৫২টি স্কুল থেকে খুদে ছাত্র-ছাত্রীরা বিজ্ঞান ভিত্তিক মডেল নিয়ে এসেছে তাদের উৎসাহ প্রদান করেন। বললেন এই ৫২ জন আগামী দিনে শিক্ষাক্ষেত্রে বৃহত্তর পদক্ষেপ নিতে তার এই বিজ্ঞান মনস্কতাই তাকে সাহায্য করবে। সেই সাথে তিনি বলেন, এই বিজ্ঞান বিষয়ক মেলা বা দৃষ্টিভঙিকে স্কুল, কলেজ স্তরে যেমন আরও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে হবে তেমনি গ্রামে, বস্তিতে ছড়িয়ে দিতে হবে।
শেষে খোয়াই জিলা পরিষদের সহ সভাধিপতি বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য্য বলেন, এই সময়ে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বার্ষিক পরীক্ষা থাকায় বিজ্ঞান মেলার প্রস্তুতি নিতে কিছুটা সমস্যা হয়েছে। রাজ্যভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা যেহেতু ২১ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে তাই স্বাভাবিকভাবেই জেলা ভিত্তিক বিজ্ঞান মেলা এর আগে সম্পন্ন করতে গিয়ে ১৭ তারিখটিকে বাছাই করতে হয়েছে। তাই সকল ছাত্র-ছাত্রীরা সম পরিমান সুযোগ পায়নি। তাছাড়া বর্তমান প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, বিজ্ঞান একদিকে নতুন নতুন প্রযুক্তি সৃষ্টি করবে। এই নতুন প্রযুক্তিকে প্রতিটা মানুষের কাছে সঠিকভাবে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্বটাও আমাদের নিতে হবে। নতুবা বিজ্ঞানের আবিস্কার সবার জন্য না, মুষ্টিমেয় কয়েকজনের হয়ে যাবে। একই সাথে খোয়াই জিলা পরিষদের সভাধিপতি সাইনি সরকার সকল ছাত্র-ছাত্রীদের বিজ্ঞান মনস্ক হবার জন্য অনুপ্রাণিত করেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর ফিতা কেটে বিজ্ঞান মেলার স্টলগুলি সবার জন্য উন্মুক্ত করেন বিধায়ক বিশ্বজিৎ দত্ত। এরপর সমস্ত অতিথিরা সবগুলি স্টল ঘুরে দেখেন। বিজ্ঞান মেলাকে কেন্দ্র করে ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের মধ্যে চরম উচ্ছাস লক্ষ্য করা যায় এদিন। তিনদিন ব্যাপী বিজ্ঞান মেলার সমাপ্তি হবে ১৯শে ডিসেম্বর। তবে ধারাবাহিকভাবে প্রতি বছর বিজ্ঞান মেলা হয় এবং ধারাবাহিকভাবে প্রস্তুতির অভাবকে দায়ি করে বিভিন্ন বক্তারা মঞ্চে আলোচনা করেন। কিন্তু প্রতি বছরই নিয়ম করে সম সংখ্যক স্কুলই বিজ্ঞান মেলায় অংশগ্রহন করে। এবং যে ছাত্র-ছাত্রীরা বিজ্ঞান বিষয়ক মডেল নিয়ে আসে তাদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় একখানা স্ক্রিপ্ট। যে স্কিপ্ট দেখে তারা তাদের মডেলকে ব্যাক্ষা করে। এতে করে খুদে ছাত্র-ছাত্রীরা কি আদৌ বিজ্ঞান বা মডেল সম্পর্কে অবহিত হচ্ছে? প্রশ্ন অভিভাকদের।