আপডেট প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৬ এপ্রিল || খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ত্রিপুরা সরকার একটি যুগান্তকারী ৯৬৯ কোটি টাকার পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছে। যার লক্ষ্য রাজ্যটিকে দুধ, ডিম, মাছ ও মাংস উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ডাঃ মানিক সাহা বুধবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোর একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে এই পরিকল্পনা পেশ করেন, যেখানে কেন্দ্রীয় ডোনার মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া উপস্থিত ছিলেন। দুগ্ধ খাতে ৮০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে আটটি আধুনিক ডেইরি ফার্ম স্থাপনের জন্য (প্রতিটিতে ২০০ গরু), পাশাপাশি গোমতী দুগ্ধ সমবায়কে শক্তিশালী করতে আরও ৭ কোটি টাকা – এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে বর্তমান ৩৫,০০০ মেট্রিক টন দুধের ঘাটতি পূরণের লক্ষ্য রয়েছে। রাজ্য ইতিমধ্যেই উন্নত প্রজনন প্রযুক্তি যেমন সেক্স-সর্টেড সিমেন কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে ২০২১ সাল থেকে ৫০,০০০ নারী বাছুর উৎপাদন করেছে। ডিম উৎপাদনে ত্রিপুরা এখন উত্তর-পূর্বের শীর্ষে (মাথাপিছু ৮৭টি ডিম), যা ‘মুখ্যমন্ত্রী প্রাণী সম্পদ বিকাশ যোজনার’ মাধ্যমে বছরে ৩ লক্ষ বাচ্চা বিতরণের ফল। এই সাফল্যকে আরও এগিয়ে নিতে ১৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হবে গ্রামীণ হ্যাচারি স্থাপনে এবং ৬ কোটি টাকা সরকারি পোল্ট্রি ফার্মগুলোর আধুনিকীকরণে। মাংস প্রক্রিয়াকরণের জন্য ১৭ কোটি টাকার একটি সমন্বিত ইউনিট এবং আঞ্চলিক খাদ্য সংকট মোকাবিলায় ৩০ কোটি টাকার একটি স্বয়ংক্রিয় ফিড প্লান্ট স্থাপনের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সাথে ৮৫৬ কিলোমিটার সীমান্ত থাকায় একটি অত্যাধুনিক রোগ নির্ণয় কেন্দ্র স্থাপনও এই পরিকল্পনার অংশ, যা সীমান্তবর্তী রোগের ঝুঁকি মোকাবিলায় সহায়তা করবে। মৎস্য খাতে বিস্তারিত প্রকল্প প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে, তবে উত্তর-পূর্ব পরিষদের (NEC) সহায়তায় পাঁচ বছরমেয়াদি একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। এই উদ্যোগ ২০২৭ সালের মধ্যে প্রোটিনের ঘাটতি ৪০% কমানো, পশুজাত পণ্যের আমদানি নির্ভরতা ৬০% কমানো এবং ৫,০০০-এর বেশি গ্রামীণ কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। NDDB ও NEC-এর প্রযুক্তিগত সহায়তায় জুলাই ২০২৪ থেকে পর্যায়ক্রমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন শুরু হবে, যেখানে দুগ্ধ ও হাঁস-মুরগি খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ত্রিপুরার এই কৃষি বিপ্লব সমগ্র উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য একটি মডেল হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।