গোপাল সিং, খোয়াই, ১০ অক্টোবর || দীপাবলির উৎসবের সময় সাধারণ মানুষের অসুবিধার কথা বিবেচনা করে বনধের দিন ও সময়সীমায় পরিবর্তন আনল তিপ্রামথা পার্টি। ৮ দফা দাবিকে সামনে রেখে ঘোষিত রাজ্যব্যাপী বনধ এখন অনুষ্ঠিত হবে ২৩ অক্টোবর, এবং তা চলবে টানা ২৪ ঘণ্টা— সকাল ৬টা থেকে পরদিন সকাল ৬টা পর্যন্ত।
শুক্রবার আগরতলায় আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান রামচন্দ্রঘাট বিধানসভার বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা। তিনি বলেন, “আগে বনধের দিন ছিল ১৩ অক্টোবর। কিন্তু দীপাবলির সময় যাতে মানুষ ভোগান্তিতে না পড়েন, তাই সাধারণ মানুষের অনুরোধে বনধের দিন পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”
রঞ্জিত দেববর্মা স্পষ্ট করে জানান, “এটি সম্পূর্ণভাবে জনস্বার্থে নেওয়া সিদ্ধান্ত। উৎসবের আনন্দে যাতে নাগরিকদের দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত না হয়, তাই এবার বনধ হবে ২৩ অক্টোবর, তবে তা হবে পূর্ণ ২৪ ঘণ্টার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি।” তিনি আরও জানান, এবার তিপ্রামথার সঙ্গে আত্মসমর্পণকারী এটিটিএফ সংগঠনের প্রতিনিধিরাও যুক্ত হচ্ছেন।
সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন এটিটিএফ চিফ চিত্ত দেববর্মা, সমাজকর্মী অসিত দাসসহ তিপ্রামথার জেলা নেতৃত্বগণ। তাঁরা বলেন, এই বনধ কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, এটি ত্রিপুরার জনজাতি সমাজের অধিকার ও রাজ্যের সাংবিধানিক মর্যাদা রক্ষার জন্য এক গণআন্দোলন।
ত্রিপুরায় অব্যাহত অনুপ্রবেশের বিষয়ে রঞ্জিত দেববর্মা বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য প্রশাসনকে অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে বহিষ্কারের নির্দেশ দিলেও ত্রিপুরা সরকার সেই নির্দেশ কার্যকর করেনি। ফলে সীমান্ত দিয়ে প্রতিনিয়ত অনুপ্রবেশ ঘটছে।” তিনি উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সফরের আগে উদয়পুর থেকে পাঁচ বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যা সমস্যার গভীরতাকে প্রকাশ করছে।
দেববর্মার অভিযোগ, “মুখ্যমন্ত্রী আশ্বস্ত করেছেন যে পুলিশ ও বিএসএফ সতর্ক রয়েছে, কিন্তু বাস্তবে তাঁদের সামনেই অনুপ্রবেশ অব্যাহত। এটি রাজ্যের নিরাপত্তা ও সামাজিক ভারসাম্যের জন্য এক বড় হুমকি।”
তিনি আরও বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সাম্প্রতিক বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, শরণার্থীদের বাধ্যতামূলক ভ্রমণ নথি বহনের নিয়ম থেকে ছাড় দেওয়া হয়েছে, যা অনুপ্রবেশ বৃদ্ধির আশঙ্কা আরও বাড়িয়েছে। “২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের আগে ধর্মীয় নিপীড়নের কারণে ভারতে আসা সংখ্যালঘুরা নাগরিকত্বের দাবিদার ছিলেন। কিন্তু নতুন নিয়মে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত যাঁরা এসেছেন, তাঁদের বৈধ নথি না থাকলেও অপরাধী ধরা হবে না— এতে অনুপ্রবেশ বাড়বেই,” বলেন তিনি।
তিপ্রামথার ৮ দফা দাবির মূল বিষয় জনজাতি অধিকার, সীমান্ত সুরক্ষা এবং রাজ্যের সাংবিধানিক দাবি। দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এই বনধের লক্ষ্য “ত্রিপুরার অস্তিত্ব ও সংস্কৃতি রক্ষা”।
রঞ্জিত দেববর্মা বলেন, “এটি কোনো রাজনৈতিক বনধ নয়, এটি জনগণের স্বার্থে ঘোষিত প্রতিবাদের দিন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করব।” তিনি আরও জানান, অ্যাম্বুলেন্স, ওষুধের দোকান ও জরুরি পরিষেবা বনধের আওতার বাইরে থাকবে, যাতে সাধারণ মানুষ কোনো অসুবিধায় না পড়েন।
রাজ্য প্রশাসন ইতিমধ্যেই বনধের প্রেক্ষিতে সতর্ক অবস্থান নিয়েছে। তবে রাজনৈতিক মহলে মতভেদ স্পষ্ট— কেউ একে গণস্বার্থের দাবি হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ মনে করছেন এটি প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক চাপ তৈরির কৌশল।
দীপাবলির আগে রাজ্যের রাজনৈতিক আবহে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে তিপ্রামথার এই সিদ্ধান্ত। রঞ্জিত দেববর্মার ভাষায়, “জনগণের কথা ভেবেই আমরা দিন বদলেছি, কিন্তু লড়াই বদলাইনি। ২৩ অক্টোবরের বনধ হবে ত্রিপুরার স্বার্থরক্ষার ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন।”
