গোপাল সিং, খোয়াই, ১০ অক্টোবর || ত্রিপুরা-বাংলাদেশ সীমান্তে ফের অনুপ্রবেশ নিয়ে উত্তাল খোয়াই। বনবাজার হয়ে চেরমা পর্যন্ত আসা তিন বাংলাদেশি নাগরিক পুলিশের চোখের সামনে হাওয়া হয়ে যাওয়ার ঘটনায় নতুন তথ্য উঠে এসেছে। চেরমা এলাকা থেকে আটক অটোচালক কিষান মোদীকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ পেয়েছে একাধিক চাঞ্চল্যকর তথ্য ও প্রমাণ।
খোয়াই থানার সূত্রে জানা গেছে, কিষানের মোবাইল ঘেঁটে পুলিশ উদ্ধার করেছে বাংলাদেশের একাধিক ফোন নম্বর, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ ও কল রেকর্ডিং। তদন্তে জানা গেছে, সীমান্তের ওপার থেকে কিষানকে বার্তা পাঠানো হতো— কখন, কোথা দিয়ে, ক’জন অনুপ্রবেশ করবে। এরপর বাংলাদেশি নাগরিকরা কাঁটাতার টপকে ত্রিপুরায় ঢুকলে, কিষান তাঁদের অটো করে তেলিয়ামুড়া রেলস্টেশন পর্যন্ত পৌঁছে দিতেন। প্রতি জনের বিনিময়ে তিনি পেতেন ৫ হাজার টাকা করে।
এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে চলছে এই মানব পাচার ও অবৈধ প্রবেশের চক্র। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, একটি সংঘবদ্ধ দালালচক্র সীমান্তের দুই পাশে সক্রিয়, যাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চলছে অনুপ্রবেশের এই পথ। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয়, স্থানীয়দের অভিযোগ— বিএসএফের “নীরব মদত” ছাড়া এমন ধারাবাহিক অনুপ্রবেশ সম্ভব নয়।
শুক্রবার সকালে বনবাজার সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে প্রবেশ করে তিন বাংলাদেশি নাগরিক। খোয়াই শহরের দিকে এগোনোর সময় চেরমা নাকা পয়েন্টে পুলিশের টহল গাড়ি দেখতে পেয়ে তারা অটো থেকে নেমে পালিয়ে যায়। মুহূর্তের মধ্যেই তারা অদৃশ্য হয়ে যায়, যেন গিলে ফেলেছে বনাঞ্চলের অন্ধকার।
অটোচালক কিষান মোদীকে পুলিশ আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। তাঁর স্বীকারোক্তি ও মোবাইল ফোনের তথ্যে স্পষ্ট— সীমান্তে একটি সুনিয়ন্ত্রিত অনুপ্রবেশ নেটওয়ার্ক কাজ করছে, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে সীমান্তবর্তী কয়েকটি গ্রাম ও বাংলাদেশি যোগাযোগমাধ্যম।
স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সীমান্তে মশা ধরার মতো নিরাপত্তা দাবি করা হয়, অথচ মানুষ পেরিয়ে যাচ্ছে কাঁটাতার টপকে! এটা যদি গাফিলতি না হয়, তবে আর কী?”
ঘটনাকে ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা খোয়াই ও চেরমা এলাকায়। পুলিশ ও রাজ্য গোয়েন্দা দফতর তদন্তে নেমেছে, তবে এখনো তিন বাংলাদেশি নাগরিকের কোনো হদিস মেলেনি।
রাজনৈতিক মহলেও বিষয়টি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে। সম্প্রতি তিপ্রামথা পার্টির বিধায়ক রঞ্জিত দেববর্মা সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে ২৩ অক্টোবর রাজ্যজুড়ে ২৪ ঘণ্টার বনধের ডাক দিয়েছেন। সীমান্ত সুরক্ষাকে রাখা হয়েছে অন্যতম মূল দাবি হিসেবে।
চেরমা সীমান্তের এই অন্তর্ধান কাণ্ডে এখন প্রশ্ন একটাই— সীমান্তে পাহারায় থাকা বাহিনী যদি এভাবে ব্যর্থ হয়, তবে ত্রিপুরার নিরাপত্তার দায়িত্ব নেবে কে?
