জাতীয় ডেস্ক ।। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, স্বাধীনতার পরে পূর্ব ভারতে প্রথম চালু হওয়া ব্যাঙ্ক বন্ধনই। এ বার সপ্তাহে সাত দিন ব্যাঙ্ক খোলা রাখার অভ্যেসও দেশে প্রথম চালু হতে চলেছে তাদের হাত ধরে। ২৩ অগস্ট উদ্বোধনের দিন থেকেই ওই নতুন রেওয়াজ তৈরি করতে চলেছে তারা। ওই দিন কলকাতায় বন্ধন ব্যাঙ্কের উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি। ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং সিইও চন্দ্রশেখর ঘোষ জানান, উদ্বোধনের দিন থেকেই ১৮টি শাখায় সপ্তাহে সাত দিন পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৮টি শাখায় এই পরিষেবা চালু করলেও, পরে অন্যান্য শাখাতেও এই প্রথা ছড়িয়ে দিতে তাঁরা আগ্রহী।
সপ্তাহে সাত দিনই পরিষেবা চালুর ইচ্ছে এর আগেও প্রকাশ করেছিল এ দেশের কিছু ব্যাঙ্ক। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন, ওই পরিষেবা চালু করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন স্টেট ব্যাঙ্কের প্রাক্তন চেয়ারম্যান প্রতীপ চৌধুরী। কিন্তু সেই পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত দিনের আলো দেখেনি। তাই সেই অর্থে, এই পরিষেবা শেষমেশ চালু হলে, বন্ধন-ই হবে পথিকৃৎ। গ্রাহকদের উন্নততর পরিষেবা দিতে জন্মেই নতুন নজির গড়বে তারা। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘২৩ তারিখে ৫০০টির মতো নতুন শাখা চালুর মাধ্যমে যাত্রা শুরু করব। এর মধ্যে প্রথম পর্যায়ে ১৮টি শাখায় সপ্তাহে সাত দিনই পরিষেবা চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলি সবই হবে মূলত কলকাতার শাখা।’’ একই সঙ্গে বন্ধন ব্যাঙ্কের কর্ণধার জানান, ওই ৫০০টি নতুন শাখার পাশাপাশি কাজ করবে আরও ২,০২২টি শাখা। ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা বন্ধন ফিনান্সিয়াল সার্ভিসেসের পরিষেবা দিতে যেগুলি ইতিমধ্যেই সারা দেশে ছড়িয়ে রয়েছে।
শুরুর দিন থেকেই গ্রাহক টানার যুদ্ধে এক ইঞ্চিও জমি ছাড়তে নারাজ চন্দ্রশেখরবাবু। যে-কারণে সুদ দেওয়ার যুদ্ধেও এগিয়ে থাকতে কোমর বেঁধেছে বন্ধন ব্যাঙ্ক। তিনি বলেন, ‘‘বাজারে যে -সুদ পাওয়া যাচ্ছে, তার থেকে কিছুটা বেশিই দেওয়ার চেষ্টা করব।’’ জানান, বন্ধন ব্যাঙ্কে সেভিংস অ্যাকাউন্টে সুদ মিলবে ৪.২৫%। ১ থেকে ৩ বছরের মেয়াদি আমানতে তা হবে ৮.৫%। ২৭টি রাজ্যে পরিষেবা দেওয়ার বন্দোবস্ত করলেও, পশ্চিমবঙ্গ-সহ পূর্বাঞ্চলে বেশি জোর দিতে চান তিনি। তাই প্রথম দফার নতুন ৫০০টি শাখার মধ্যে রাজ্যেই খোলা হবে প্রায় ২৫০টি।
গত বছর ১ এপ্রিল দেশের বৃহত্তম ক্ষুদ্র-ঋণ সংস্থা বন্ধনকে ব্যাঙ্ক খোলার প্রাথমিক ছাড়পত্র দেয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। শর্ত ছিল, ব্যাঙ্কের দরজা খুলতে হবে ১৮ মাসের মধ্যে। সেই হিসেবে সময়সীমা পেরোনোর মাস দুয়েক আগেই ব্যাঙ্কিং পরিষেবা চালু করতে চলেছে তারা।
তবে চন্দ্রশেখরবাবু জানান, ব্যাঙ্কিং পরিষেবা শুরুর পরেও ক্ষুদ্র-ঋণ দেওয়ার বিষয়টি চালু রাখতে চান তাঁরা। তাঁর দাবি, ‘‘এ জন্য নতুন ব্যাঙ্কের পরিষেবাকে দু’ভাগে ভাগ করা হবে। এক দিকে, বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের পরিষেবা দেওয়া হবে নতুন শাখা খুলে। যেখানে ছোট এবং মোটা অঙ্ক— দু’ধরনেরই ঋণ ও আমানত লেনদেন হবে। অন্য দিকে, আগের মতোই ক্ষুদ্র-ঋণ পরিষেবা চালু থাকবে ২,০২২টি শাখার মাধ্যমে।
চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘যে-সমস্ত গ্রাহক ক্ষুদ্র-ঋণ পরিষেবা পেতে চান, প্রথমে তাঁদের সাধারণ শাখায় অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। পরে অবশ্য তাঁরা পরিষেবা পাবেন সব ক্ষুদ্র-ঋণ শাখা থেকেই। আগে সেখান থেকে শুধু ঋণ পেতেন। এখন রাখতে পারবেন আমানতও।’’ এখন দেশে বন্ধনের ৬৬ লক্ষ ক্ষুদ্র-ঋণ গ্রাহক রয়েছেন। চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য, উদ্বোধনের দিনই ব্যাঙ্কের গ্রাহক সংখ্যা ১ কোটিতে নিয়ে যাওয়া। ক্ষুদ্র-ঋণের ৬৬ লক্ষ গ্রাহকও ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্টহোল্ডার হবেন।’’
বন্ধনই প্রথম বেসরকারি ব্যাঙ্ক, যাদের সদর দফতর কলকাতায়।