কাশি সিরাপ নিয়ে কড়া নির্দেশিকা: শিশুদের সুরক্ষায় কেন্দ্রের উদ্যোগ, ত্রিপুরা সহ দেশের সমস্ত রাজ্যগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ

গোপাল সিং, খোয়াই, ০৪ অক্টোবর || কাশি সিরাপের নিরাপত্তা নিয়ে একাধিক দেশে শিশু মৃত্যুর ঘটনা সামনে আসার পর অবশেষে কেন্দ্রীয় সরকার কঠোর অবস্থান নিয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ডিরেক্টরেট জেনারেল অব হেলথ সার্ভিসেস (DGHS) নতুন এক নির্দেশিকায় জানিয়েছে, দুই বছরের নিচে কোনও অবস্থাতেই শিশুদের কাশি সিরাপ দেওয়া যাবে না। পাশাপাশি পাঁচ বছরের নিচে শিশুদের ক্ষেত্রেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের ওষুধ ব্যবহার না করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সরকারের এই পদক্ষেপকে শিশুস্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুদের কাশি বা সর্দি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই স্বাভাবিকভাবে সেরে যায়। তাই অযথা ওষুধ খাওয়ানো প্রয়োজন নেই। বরং বাড়িতে যত্ন, পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং সঠিক পরিচর্যাই শিশুর সুস্থতার জন্য যথেষ্ট। অতিরিক্ত ওষুধের ব্যবহার শিশুদের শরীরে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি করতে পারে। AIIMS ও ICMR-এর চিকিৎসকরাও কেন্দ্রের এই নির্দেশিকাকে স্বাগত জানিয়ে বলছেন, এতে শিশুদের অনাবশ্যক ঝুঁকি এড়ানো সম্ভব হবে।
অন্যদিকে, সরবরাহ ব্যবস্থার দিকেও কড়া নজর রাখছে সরকার। সম্প্রতি চণ্ডীগড় প্রশাসন নিশ্চিত করেছে, তাদের রাজ্যে কোনও নিষিদ্ধ ব্যাচ প্রবেশ করেনি এবং বাজারে সরবরাহকৃত সব কাশি সিরাপই নিরাপদ। যদিও তামিলনাড়ুর পরীক্ষায় কয়েকটি নমুনায় ভেজাল উপাদান ধরা পড়েছে, তবুও কেন্দ্র জানিয়েছে যে ওই ব্যাচ বাজারে ছড়ায়নি। একই সঙ্গে সব রাজ্যকেই নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে সন্দেহভাজন সিরাপ পাওয়া মাত্রই তা বাজেয়াপ্ত করা হয়।
কেন্দ্র ইতিমধ্যেই একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে যেখানে ICMR, AIIMS, NCDC এবং NIV-এর মতো শীর্ষ গবেষণা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে কাজ করছে। এই কমিটির লক্ষ্য হল বাজারে আসা প্রতিটি সিরাপের মান কঠোরভাবে পরীক্ষা করা এবং প্রয়োজনে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। একইসঙ্গে ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলোকে Good Manufacturing Practices (GMP) মেনে চলতে বাধ্য করা হয়েছে।
শিশুস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ শুধুমাত্র জনস্বাস্থ্যের জন্যই নয়, ভারতের ফার্মাসিউটিক্যাল শিল্পের বিশ্বাসযোগ্যতা রক্ষার জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক মহলে ভারতের তৈরি কিছু সিরাপ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছিল। সরকার এবার সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়ে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে শিশুদের জন্য নিরাপদ স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করতে চাইছে।
ত্রিপুরা সহ দেশের সমস্ত রাজ্যে নির্দেশিকা পাঠানো হয়েছে। স্বাস্থ্য দপ্তরগুলিকে বলা হয়েছে, হাসপাতাল, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং ফার্মেসিগুলিতে বিশেষ নজরদারি চালাতে হবে। একইসঙ্গে অভিভাবকদের সচেতন করা হচ্ছে যাতে তারা অকারণে ওষুধ ব্যবহার না করেন এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন।
সব মিলিয়ে, শিশুদের নিরাপত্তা ও জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে কাশি সিরাপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে কেন্দ্রের এই কড়া অবস্থানকে সময়োপযোগী পদক্ষেপ বলেই মনে করছেন চিকিৎসক, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং প্রশাসন। সরকারের বার্তা স্পষ্ট — শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে কোনও ঝুঁকি নেওয়া হবে না, আর তাই রাজ্যগুলোকে সর্বোচ্চ সতর্ক থেকে এই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে হবে।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*