গোপাল সিং, খোয়াই, ১৪ অক্টোবর || খোয়াই থেকে গত ১৪ অক্টোবর খোয়াই প্রতিনিধির প্রথম প্রকাশিত প্রতিবেদনের পরে খোয়াই থানা ও সুভাষপার্ক পুলিশ ফাঁড়ির যৌথ তৎপরতা এবং স্থানীয় জনগণের সহায়তায় ধৃতদের বিরুদ্ধে নতুন তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে। প্রথমে ‘খোয়াইয়ে পুলিশের জালে ধরা ৬ বাংলাদেশী নাগরিক, আটক ১ জন ত্রিপুরার নিকটাত্মীয় যুবক, সীমান্তে বিএসএফের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন’ সংবাদটি প্রকাশিত হলে বিষয়টি আগরতলার জিআরপি থানার নজরে আসে এবং ব্যাপক তদন্ত শুরু করা হয়।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, খোয়াই পুলিশের এই সফলতার কারণে শুধু অনুপ্রবেশ রোধই হয়নি—ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির ফলে সীমান্তের ওপার থেকে বাংলাদেশি নাগরিকদের দ্বারা পরিচালিত বর্গীয় আর্থিক প্রতারণার প্রমাণ মিলেছে। খোয়াইয়ের পুলিশের এই সফলতার ফলে এই চাঞ্চল্যকর কেসের প্রধান সূত্র-লিংক নিয়ন্ত্রণে আসে। এতে দুটি দেশের যৌথ আইনগত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়ার পথে এগোনোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পুলিশ আশা করছে, অচিরেই ধৃতদের বিজিবি বা সংশ্লিষ্ট বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর সংক্রান্ত কার্যক্রম সুশৃঙ্খল ভাবে চালানো হবে।
ধৃতদের সম্পর্কিত প্রাথমিক হিসাব-বিবরণ অনুযায়ী, গ্রেফতারের সময় পুলিশের নজরে এসেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যাংক ও ব্যক্তিগত স্তরে সম্পদের বড়সড় আত্মসাৎ সংক্রান্ত অভিযোগ। অভিযোগ ও গ্রাহক-বক্তব্যের ভিত্তিতে তারা বাংলাদেশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছে অর্থ আত্মসাৎ করেছে বলে দাবি উঠেছে। পুলিশের কাছে পাওয়া তথ্য ও স্থানীয় সূত্রের বিবরণ অনুযায়ী অভিযুক্তরা নিম্নরূপ— তারা হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলার বাসিন্দা বলে দাবি করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে সেখানে একাধিক মামলা রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রতারণার শিকার ব্যক্তিগত ও প্রতিষ্ঠানভিত্তিক আর্থিক দাবির তালিকায় রয়েছে (আনুমানিক) — মার্কেন্টাইল ব্যাংক: ৮০ লাখ টাকা, ব্র্যাক ব্যাংক: ৬৭ লাখ টাকা, লংকা বাংলা: ৩২ লাখ টাকা, আশা এনজিও: ৯ লাখ টাকা। ব্যক্তিগত অভিযোগে স্থানীয় ব্যবসায়ী অজিত রঞ্জন রায় দাবি করেছেন ৩০ লাখ, সৌমেন পাল চৌধুরী ২৫ লাখ, সুশীল বসাক ২১ লাখ, সৌমিত্র পাল চৌধুরী ১৬ লাখ, নুরুল ইসলাম ৭ লাখ টাকা ইত্যাদি।
এদিকে পুলিশের একটি সূত্র বলছে, ধৃতদের সঙ্গে আরও ১০-১২ জনের একটি গ্রুপের সন্ধান পাওয়া গেছে, যাদের ছবি ও তথ্যের ভিত্তিতে কাজ চলছে; দুর্গাপূজার আগে ওই কূটচক্র ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল, কিন্তু তখন ধরা পড়েনি।
স্থানীয় নাগরিক তথা ভুক্তভোগীরা ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্রুত সমন্বিত তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। এক ভুক্তভোগী জানান, “যদি এই টাকা উদ্ধার না করা যায় বা প্রতারকরা তাদের দেশে ফিরেও বেকায়দায় না পড়ে, তাহলে পরিবারের প্রতিদিনের জীবন বিপন্ন হবে।” বাংলাদেশে ইতোমধ্যে ওইদের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় বেশ কিছু অভিযোগ (এফআইআর) রয়েছে—সেগুলোর কপি ও প্রমাণাদি পুলিশের হাতে এসেছে এবং তা দুই দেশের দফতরে পাঠানো হচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
