দেবজিত চক্রবর্তী , আগরতলা, ২৬ মে ।। পরাধীন ভারতবর্ষে জাত, পাত, ধর্মের বিভেদ জীইয়ে রেখে ব্রিটিশের শাসনের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে গোটা জাতিকে সঞ্জীবনী শক্তি জুগিয়েছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। মুসলমান সম্প্রদায়ের হয়ে বিদ্রোহী কবি ছিলেন সাম্প্রদায়িকতা, সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে। ব্রিটিশের বিরুদ্ধে লেখার জন্য বহুবার হয়েছিলেন কারারুদ্ধ, অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে লিখেছিলেন – ‘কারার ঐ লৌহ কপাট ভেঙ্গে ফেল করলে লোপাট’ আবার সাম্প্রদায়িক ঐক্যের আহ্বানে ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম, হিন্দু মুসলমান’ তাঁরই অনবদ্য সৃষ্টি। পারিবারিক ক্ষেত্রে ছোট থেকেই লিপ্ত হয়ে পড়েছিলেন জীবন যুদ্ধে – পেটের জন্য নানা স্থানে কাজ করেছেন। পড়াশুনার ইচ্ছে থাকলেও জীবনের ঘাত প্রতিঘাতে বিঘ্ন হয়েছে শিক্ষা গ্রহন। সাহিত্যের অঙ্গনে কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন বহু বর্ণের সমন্বয়ে উদ্ভাসিত উৎসধারা। ইসলামী গান আর শ্যামা সঙ্গীত লিখেছেন একই কলমে – এখানেই নজরুল ইসলাম সর্বধর্মের মিলনের চিরজাগ্রত প্রতীক।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ সালের ২৬শে মে জন্মগ্রহন করেছিলেন কাজী নজরুল ইসলাম। তাঁর ১১৭ তম জন্মদিবস উপলক্ষ্যে সরকারী – বেসরকারী স্তরে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় গোটা রাজ্যে। নজরুলের অবিনশ্বর সৃষ্টি ধারায় তাঁকে জন্মদিবসে ফুল মালায় সন্মান শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়েছে। নজরুলের সাহিত্য সৃষ্টি আর জীবনের নানা পর্বের কথায় তিনি যুগে যুগে নিঃশোষিত চিরায়ত ফল্গুধারা প্রমানিত হয়েছে। সুরের ব্যাঞ্জনা, শব্দের স্ফুরন, ভাষার প্রশোপনে কাজী নজরুল বন্দিত হয়েছেন পুণ্য জিন্মদিবসে। নজরুল যুদ্ধস্থলে সৈনিকের অনুপ্রেরনা, রুদ্ধ মানুষের লড়াইয়ের সাথে, দারুচিনির সুরে শিশুর সহপাঠী আবার অত্যাচারীত মানুষের কাছে ধূমকেতু সম মহাশক্তি। সম্প্রীতির সেই গান ‘মোরা একই বৃন্তে দুটি কুসুম’ আর মানুষ হয়ে অধিকার আদায়ে ‘বল বীর, চির উন্নত মম শির’ ধ্বনিত হয়েছে গোটা রাজ্যে কাজী নজরুলের ১১৭ তম জন্মদিবসে।