আন্তর্জাতিক ডেস্ক ।। চীনের উত্তরপূর্বাঞ্চলীয় শাঞ্জি প্রদেশে ১২ বছর ধরে হিমায়িত ভ্রূণ থেকে একটি সুস্থ শিশুর জন্ম হয়েছে। দেশটিতে টেস্ট টিউব শিশু জন্মদানের ইতিহাসে এটাই দীর্ঘতম সময় ধরে ভ্রূণ সংরক্ষণের ঘটনা। লি নামের এক ৪০ বছরের নারী বুধবার সকালে তার দ্বিতীয় এ পুত্রসন্তানের জন্ম দেন প্রাদেশিক রাজধানী তাংদু হাসপাতালে। জন্মের সময় শিশুটির ওজন ছিল প্রায় সাড়ে তিন কেজি।
স্বাস্থ্য জটিলতার কারণে স্বাভাবিকভাবে লি গর্ভধারণে সক্ষম না হওয়ায় ২০০৩ সাল থেকে কৃত্রিমভাবে সন্তান ধারণের চেষ্টা চালিয়ে আসছিলেন। ২০০৪ সালে তিনি প্রথম সন্তানের জন্ম দেন এবং তখন থেকে জরুরি প্রয়োজন হতে পারে মনে করে হাসপাতালটিতে ভ্রূণ সংরক্ষণের জন্য প্রতিদিন তিন ইউয়ান করে খরচ করে আসছিলেন। এর মধ্যে তিনটি ভ্রূণ কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখতে পেরেছিলেন চিকিৎসকরা। গত বছর চীন সরকার এক সন্তাননীতি শিথিল করলে লি দ্বিতীয় সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। লি’র গর্ভে চিকিৎসকরা সেরা দু’টো ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করলেও এর মধ্যে বেঁচে গিয়েছিল কেবল একটি, যার ফলশ্রুতি লি’র দ্বিতীয় সন্তান। প্রসঙ্গত, চীনে বন্ধ্যাত্বের হার অনেক বেশি। চায়না পপুলেশন অ্যাসোসিয়েশনের ২০১২ সালের পরিসংখ্যানিক তথ্য থেকে জানা যায়, সে বছর দেশটির প্রায় চার কোটি মানুষ বন্ধ্যাত্বে ভুগছিলেন, যা দেশটিতে সে সময় সন্তান জন্মদানে সক্ষম মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় সাড়ে ১২ শতাংশ ছিল। বন্ধ্যাত্বের অন্যতম চিকিৎসা হলো ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন বা আইভিএফ, অর্থাৎ ভ্রূণ সংরক্ষণ ও মায়ের গর্ভে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে সন্তান জন্মদান। তাংদু হাসপাতাল ২০০৩ সাল থেকে সন্তান জন্মদানে অক্ষম দম্পতিদের ভ্রূণ সংরক্ষণ করতে শুরু করে। এখন পর্যন্ত হাসপাতালটিতে প্রায় এক লাখ ভ্রূণ সংরক্ষণ করা হয়েছে, ২৭ হাজার ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা হয়েছে এবং চার হাজার ২৯৩জন সুস্থ টেস্ট টিউব শিশু জন্ম নিয়েছে হাসপাতালটিতে। এ ধরনের ক্ষেত্রে হাসপাতালটির সাফল্যের হার ৪০ শতাংশ। চীনের প্রথম টেস্ট টিউব শিশু ঝেং মেংজু জন্ম নেন ১৯৮৮ সালে। আর বিশ্বের প্রথম টেস্ট টিউব শিশু ল্যুইস ব্রাউন জন্ম নেন যুক্তরাজ্যে, ১৯৭৮ সালে। এরপর থেকে বিশ্বজুড়ে প্রায় পাঁচ কোটি টেস্ট টিউব শিশুর জন্ম হয়েছে।