সমীর দেবসরকারের স্মরণ সভায় সাম্য কেন্দ্র ক্লাব আয়োজন করল স্বাস্থ্য ও রক্তদান শিবিরের

bldগোপাল সিং, খোয়াই, ২৫ সেপ্টেম্বর ।। খোয়াই সিঙ্গিছড়া গ্রামের স্থানীয় ক্লাব সাম্যকেন্দ্র। দীর্ঘ পুরনো এই ক্লাবের প্রাক্তন সম্পাদক প্রয়াত সমীর দেবসরকারের স্মরণে ক্লাবের উদ্যোগেই রবিবার ২৫শে সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় ক্লাব প্রাঙ্গনে এক স্মরণ সভার আয়োজন করা হয়। স্মরণ সভাকে কেন্দ্র করে হয় স্বাস্থ্য শিবির ও রক্তদান শিবির। উক্ত স্মরণ সভা, স্বাস্থ্য এবং রক্তদান শিবিরে বেলা বাড়ার সাথে সাথে ক্রমশ: ভীড় বাড়ে। দিনের শুরুটা হয় ক্লাব প্রাঙ্গনে প্রয়াত সমীর দেবসরকারের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করার মধ্য দিয়ে। এলাকার অনেক প্রবীন ব্যাক্তিরাই স্মরণ সভায় উপস্থিত থেকে প্রিয় জননেতাকে শ্রদ্ধাঞ্জলী জ্ঞাপন করেন। পরে স্মরণ সভাটি হয় শরৎচন্দ্র দ্বাদশ শ্রেনী বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে। এদিনের স্মরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন খোয়াই জিলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য্য, বিধায়ক পদ্মকুমার দেববর্মা, এডিসি চেয়ারম্যান রঞ্জিত দেববর্মা, সমাজসেবী বিশ্বজিৎ দত্ত, সুখেন্দু বিকাশ দে, প্রয়াত সমীর দেবসরকারের ভাই সুখেন্দু দেবসরকার, সঞ্জয় দেবসরকার, তাপস দেবসরকার প্রমুখ।
স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে খোয়াই জিলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য্য বললেন, ‘একদিন খোয়াইয়ের এই সিঙ্গিছড়া গ্রাম থেকেই ভিক্ষুক ও ভিক্ষাবৃত্তি নির্মূল করার শপথ ভবিষ্যতে প্রতিফলিত হয় ভিক্ষুকহীন আধুনিক খোয়াই গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে। সিঙ্গিছড়া গ্রাম থেকেই খোয়াই শহরে ছড়িয়ে পড়ত ভিক্ষুকরা। অন্ন-বস্ত্রের বালাই ছিলনা। একদিন সিঙ্গিছড়া গ্রামে গিয়েছিলেন প্রয়াত বিধায়ক সমীর দেবসরকার। সেখানে গিয়ে এক গৃহীনির কাছে জল চাইতেই ঐ মহিলা ধীরে ধীরে পিছুতে শুরু করেন। জলের জন্য অপেক্ষমান প্রয়াত বিধায়ক সমীর দেবসরকারকে অপেক্ষাই করতে হয়েছিল। জল মিলেনি। কারন মহিলার পরিধেয় বস্ত্র ছিল ছন্নছাড়া। তাই লজ্জায় সেদিন প্রিয় মানুষটিকে জল দিতেও এগিয়ে আসতে পারেননি। এই ঘটনা অনেকটাই নাড়িয়ে দিয়েছিল প্রয়াত বিধায়ক সমীর দেবসরকারকে। এখন গ্রাম আর গ্রামে নেই। শহুরে রূপ নিতে শুরু করেছে।
এছাড়া স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে সাম্য কেন্দ্র ক্লাব ও তার নব উত্থানে সমীর দেবসরকারের ভূমিকা তুলে ধরেন সমাজসেবী বিশ্বজিৎ দত্ত, প্রয়াত সমীর দেবসরকারের ভাই সুখেন্দু দেবসরকার সহ অন্যান্যরা। জাতি-উপজাতির সেতু বন্ধনে প্রয়াত জননেতার ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেন এডিসি চেয়ারম্যান রঞ্জিত দেববর্মা।
এরপরই শুরু হয় রক্তদান শিবির। সাথে শুরু হয় স্বাস্থ্য শিবিরও। রক্তদান শিবিরে রক্তদান করেন খোয়াই জিলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি বিদ্যুৎ ভট্টাচার্য্য সহ অন্যান্যরা। এছাড়া স্বাস্থ্য শিবিরে ইসিজি, সোনোগ্রাফি সহ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা যেমন বিনামূল্যে করা হয় তেমনি আগরতলা থেকে আগত চর্মরোগ, চক্ষু, মেডিসিন বিশেষজ্ঞরাও উপস্থিত থেকে এলাকার সকল অংশের জনসাধারনকে চিকিৎসা পরিষেবা প্রদান করেন। বিনামূল্যে প্রদান করা হয় ঔষুধপত্র। ক্লাবের এই মহতি উদ্যোগের ভূয়শী প্রশংসা করলেন গ্রামবাসীরা। উপকৃত হলেন শত শত মানুষজন। কোলে শিশু নিয়ে অনেক মায়েরাই ভীড় জমান স্বাস্থ্য শিবিরে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সকলেই এই স্বাস্থ্য শিবির থেকে উপকৃত হলেন। খোয়াইয়ের পুরনো এই ক্লাব ঐতিহ্য বজায় রেখে আগামী দিনেও সামাজিক কর্মসূচীতে এগিয়ে আসবে বলে আশা ব্যক্ত করেন গ্রামবাসীরা।

 

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*