উপনির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় কর্মীদের অক্সিজেন দিতে খোয়াইয়ে তৃনমুলের কর্মী সভায় মুকুল রায়

tmc tmc-jpg1গোপাল সিং, খোয়াই, ২৩ অক্টোবর ।। জমে উঠেছে রাজনৈতিক ময়দান। লক্ষ্য ১৯শে’র উপনির্বাচন। তথ্য অনুযায়ী ২৫-খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রে মোট ভোটার সংখ্যা হল ৩৯,৬০০। এই সংখ্যাটাকে কাবু করতে ভোটের ময়দানে নেমে পড়েছে ডান-বাম সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলিই। এই লক্ষ্যেই রবিবার তৃণমুল কংগ্রেসের নির্বাচনী কর্মী সভা অনুষ্ঠিত হল খোয়াইতে। রবিবার উক্ত কর্মী সভাটি অনুষ্ঠিত হয় খোয়াই কোহিনুর কমপ্লেক্সের ত্রিতলে অবস্থিত ময়ুর কলাকেন্দ্রে। ১৯শে’র উপনির্বাচনকে সামনে রেখে আয়োজিত এদিনকার কর্মী সভার প্রধান বক্তা হিসাবে সুদুর পশ্চিম বাংলা থেকে উড়ে এলেন সর্ব্বভারতীয় তৃণমুল কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায়। মুলত দলীয় কর্মীদের অক্সিজেন জোগাতেই এদিনের কর্মী সভার আয়োজন। সভার মঞ্চে মুকুল রায় সহ উপস্থিত ছিলেন তৃণমুল নেতা দীপক মজুমদার, অরুণ কান্তি ভৌমিক, সুরজিৎ দত্ত, নিতাই চৌধূরী, ২৫-খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রের তৃণমুল প্রার্থী মনোজ দাস সহ অন্যান্য তৃণমুল নেতৃত্বরা।
রবিবার দুপুর ১২টা নাগাদ শুরু হয় কর্মী সভাটি। পশ্চিম বাংলা থেকে উড়ে আসা সর্ব্বভারতীয় তৃণমুল কংগ্রেসর সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায় বললেন, ত্রিপুরা রাজ্যে বামফ্রন্ট ২৪ বছর ধরে ক্ষমতায় রয়েছে কিন্তু পশ্চিম বাংলায় ছিল ৩৫ বছরের শাসন। সিপিএম এর আঁতুর ঘর হচ্ছে পশ্চিম বাংলা। সেখান থেকে শুধু বিদায় নেয়নি, তাদের চাটি-বাটি সব উড়ে গেছে। সিপিএম বলতে কিছু নেই পশ্চিম বাংলায়। আপনাদের রাজ্যে হবেনা কেন? উপস্থিত কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশ্যে বললেন, আপনাদের মুখের চেহারাটা পাল্টাতে হবে। ভাবতে হবে যে আমরা জিততে পারি। তবে উপনির্বাচনে তৃণমুল জিতলে মানিক সরকার চলে যাবেনা। এই উপনির্বাচনে তৃণমুল জিতলে ত্রিপুরা থেকে বামফ্রন্ট চলে যাবেনা। কিন্তু উপনির্বাচনে জিতলে একটা বার্তা প্রশাসনের কাছে যাবে। তাই জিততে হবে। আমরা তৃণমুল কংগ্রেস। পশ্চিম বাংলা বা ত্রিপুরা নয়, আমরা সব ঐক্যবদ্ধ। তাই মমতা ব্যানর্জীর নেতৃত্বে ত্রিপুরার মানুষের গনতান্ত্রিক অধিকার ফিরিয়ে দেবেন বলে তৃনমুল কর্মী-সমর্থকদের আশ্বস্ত করলেন মুকুল বাবু। সেই সাথে দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে তিনি বললেন, মনোনয়ন জমা দেওয়া পর ২রা নভেম্বর থেকে যে প্রচার চলবে তা চলবে ১৭ই নভেম্বর পর্যন্ত। এমন একটা দিন বাদ থাকবে না যেদিন রাস্তায়-পাড়ায় তৃণমুলের সভা হবেনা।
তৃণমুল কর্মী সভার মঞ্চ থেকেই মুকুল রায় বলেন, সিপিএম পার্টি আগাছা সরাবার কাজ-কর্মী। ২৩ বছর ধরে আগাছা ভর্ত্তি হয়ে আছে এটা মানিক বাবু মানছেন। মুকুল রায়ের অভিমত, মানিক বাবু বলেছেন সিপিএম পার্টিতে আগাছা ধরেছে আগাছা বাদ দিতে হবে। হাঠৎ কেমন করে এই চৈতন্য হল, প্রশ্ন মুকুল রায়ের। তিনি বলেন মানিক বাবু লোকটা দেখতে ওরম, লোকটা কৌশলী লোক। চালাক এবং ধূর্ত, এই দুটো শব্দের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। মানিক বাবু হচ্ছেন ধূর্ত লোক। মানিক বাবু এমন ভাবে চলেন, এমনভাবে হাঁটেন যেন মানিক বাবু কিচ্ছু জানেন না। অত্যান্ত ভদ্রলোক।
কলকাতায় গিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস একসাথে আছে বক্তৃতা দিয়ে এলেন। আর ত্রিপুরায় এসে তিনি বললেন আমরা ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা। এই মানুষটা সম্পর্কে সতর্ক থাকতে হবে। তারা নিজেরাই জানেন বিপ্লব-টিপ্লব হবেনা। কোন অবস্থাতেই যেকোনভাবে ক্ষমতায় দখল রেখে কিছু কুড়ে-খুবরে খেয়ে নিতে হবে। এটাই হচ্ছে মার্কসবাদী কমিউনিষ্ট পার্টির নীতি।
মুকুল বাবু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ভারতবর্ষে যেখানে প্রতি হাজার মানুষের মধ্যে ২৩ জন বেকার সেখানে ত্রিপুরায় প্রতি হাজারে বেকারের সংখ্যা ১৯৮ জন। ২৩ বছরের বাম রাজত্বে আপনারা কি পেলেন? আজ প্রতিটা মানুষের কাছে গিয়ে এই প্রশ্নটা করতে হবে। সেই সাথে মুকুল বাবু বললেন, ত্রিপুরার মানুষের অসুখ হলে তারা গৌহাটি যায়না। যদি কোন দূরারোগ্য ব্যাধি হয় তবে কেউ দিল্লি যায়না। সবাই কলকাতায় যায়। ত্রিপুরার মানুষ লেখা-পড়া শিখতে গৌহাটি কিংবা দিল্লি নয় কলকাতায় যায়। শিক্ষা-স্বাস্থ্য-সংস্কৃতির বিষয়ে ত্রিপুরার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে যে রাজ্য, সে রাজ্যের নাম পশ্চিম বাংলা। কিন্তু এই পশ্চিম বাংলায় বিগত ৩৫ বছরে ৫৬ হাজার মানুষ খুন হয়েছেন এবং এই তথ্য বলছে ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো। প্রতি বছর গড়ে কৃষক আত্মহত্যা করত ১০৭০ জন।
ত্রিপুরা রাজ্যে যেমন জাতি-উপজাতির একটা সমস্যা তৈরী করে বামফ্রন্ট নির্বাচনের আগে উস্কানি দেয় তেমনি পশ্চিম বাংলায় দার্জিলিংয়ে ১৯৮৪ সালের পর থেকে পাহাড়ে সমতলের মানুষজন যেতে পারতনা। ইন্দিরা গান্ধীও জাননি, রাজীব গান্ধীও জাননি, জ্যোতি বসু কিংবা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য্যও জাননি। বিগত ৩৫ বছরে পশ্চিম বাংলায় উগ্রপন্থা দেখা দেয়। এর ফলে রোজ খুন হতো। কখনো সিপিএম কর্মী খুন, কখনো কংগ্রেস, তৃণমুল কর্মী বা কোন বিপথগামী যুবক খুন করা হয়। সাধারন মানুষও খুন হয়েছেন। বুদ্ধ বাবু বললেন এদের মোকবিলা করতে হবে। আমাদের লোকেদের হাতে অস্ত্র দিতে হবে। অস্ত্র দিয়ে তৈরী হলো হার্মাদ বাহিনী। কিন্তু তাতে খুনোখুনির সংখ্যা বেড়ে গেল। এভাবেই একে একে পশ্চিম বাংলা এবং মমতা বন্দোপাধ্যায়ের বিভিন্ন কর্মসূচী তথ্য সহ তুলে ধরেন সর্ব্বভারতীয় তৃণমুল কংগ্রেসর সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায়।
তবে সর্ব্বভারতীয় তৃণমুল কংগ্রেসর সভাপতি তথা সাংসদ মুকুল রায়ের আলোচনায় বেশীরভাগই উঠে আসা পশ্চিম বাংলার প্রসঙ্গ দলীয় কর্মীদের মনে দাগ কাটতে পারেনি। ত্রিপুরায় কি হবে, কিভাবে বামফ্রন্টকে পরাস্ত করা যাবে, কিভাবে সাংগঠনিক কাজ হবে তা নিয়ে কোন রশদই খোঁজে পেলেন না তৃণমুল কর্মীরা। তাছাড়া খোয়াইয়ের জনগন কিন্তু দীপক মজুমদারকে প্রার্থী হিসাবে চেয়েছিলেন। কারন বিগত বিধানসভা নির্বাচনে দীপক মজুমদার যেভাবে সুখে-দু:খে সাধারন মানুষের পাশে সামিল হয়েছেন এবং সব দিক দিয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করেছেন তার তুলনায় বিগত কোন নেতৃত্ব করেছে বলে মনে করেন না জনসাধারন। জনগনের মতে দীপক মজুমদারের একটা স্বচ্ছ ভাবমূর্ত্তি ছিল। সর্বদা জনগনের সাথে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্রেও তিনি এগিয়ে। উনার প্রতি মানুষের আকর্ষনের ফলস্বরূপ রবিবারের তৃনমুল কর্মী সভায় দীপক মজুমদারের ভাষন কয়েকবার কর্মীদের কাছ থেকে করতালি পেয়েছেন। যা সবার নজর কাড়ে।
যদিও জনগন মনে করছেন মনোজ দাস সেই বাতাস তুলতে পারবেন কিনা। আজ পর্যন্ত ২৫-খোয়াই বিধানসভা কেন্দ্রের বামফ্রন্ট নেতা-কর্মী দলে টানতে পারেনি খোয়াই তৃণমুল কংগ্রেস। পথসভা আর ডেপুটেশন দিয়ে বামফ্রন্টের সাথে মোকাবিলা করা যাবে কিনা সন্দেহ থাকছেই। শুধু কংগ্রেস ভেঙে তৃণমুল, কিন্তু বামফ্রন্ট ভাঙার কোন বড় ধরনের ভূমিকা নেই বর্তমান খোয়াই তৃণমুল নেতৃত্বদের।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*