স্বাস্থ্য ও সচেতনতা ডেস্ক ৷৷ পৃথিবীতে নারীরা যত রকমের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন তার মধ্যে জরায়ুমুখ ক্যান্সার দ্বিতীয়। এটি নারীর প্রজননতন্ত্রের এক ধরনের ক্যান্সার। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ১৩ হাজার নারী এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে অন্তত ৬ হাজার ৫০০ জন আক্রান্তের বছরই মারা যান। ক্যান্সার মরণব্যাধি হলেও জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধযোগ্য। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন একটু সচেতনতা, সঠিক সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ ও যথোপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের কারণ –
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের প্রধান কারণ হচ্ছে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের সংক্রমণ। এই ভাইরাস প্রধানত যৌন সম্পর্কের মাধ্যমে ছড়ায়। প্রায় ১০০ রকমের হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস রয়েছে। এর মধ্যে ১৫টি ভাইরাস এই ক্যান্সারের সঙ্গে জড়িত। তবে ৫টি ভাইরাস এই ক্যান্সারের জন্য অধিক কার্যকরী। এগুলো হলো : এইচপিভি ১৬ ও এইচপি ১৮ ( এই দুই ভাইরাস ৭০ ভাগ জরায়ু ক্যান্সারের জন্য দায়ী), এইচপিভি ৩১, ৩৩ ও ৪৫ ( এই তিন ভাইরাস ১০ ভাগ দায়ী)। এছাড়াও আরো কিছু কারণে জরায়ুমুখ ক্যান্সার হতে পারে। যেমন- বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, অল্প বয়সে সহবাস, ঘন ঘন সন্তান ধারণ, বহুগামিতা, দীর্ঘদিন একনাগাড়ে জন্মবিরতিকরণ পিল গ্রহণ, অনিরাপদ যৌন সম্পর্ক।
জরায়ুমুখ ক্যান্সারের লক্ষণ –
প্রাথমিক অবস্থায় এই ক্যান্সারের তেমন লক্ষণ পরিলক্ষিত না হলেও রোগ যখন ছড়িয়ে পড়ে তখন কিছু উপসর্গ দেখা দেয়। এগুলো হল-
১. অনিয়মিত রক্তস্রাব।
২. অতিরিক্ত রক্তস্রাব।
৩. দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব।
৪. সহবাসের পর রক্তপাত।
৫. তলপেটে ও কোমরে ব্যথা ইত্যাদি।
যে পরীক্ষার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব জরায়ুমুখে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা আছে, সেগুলো হল-
Paptest, Colpos copy, Cervical Bioposy, ভি আই টেস্ট, এইচপিভি টেস্ট।
জরায়ুমুখ ক্যান্সার প্রতিরোধক টিকা –
টিকার মাধ্যমে এই ক্যান্সার প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব। বাংলাদেশে এই টিকা Cervarix নামে পরিচিত। এই টিকার মাধ্যমে জরায়ুমুখ ক্যান্সার ৭০-৮০ ভাগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। ৯ বছরের বেশি বয়সী মেয়ে এই টিকা নিতে পারে। ৯ থেকে ১৪ বছর বয়সী মেয়েদের জন্য এই টিকার ২টি ডোজ। ১ম ডোজ নেওয়ার ছয় মাস পর ২য় ডোজ। ১৫ বছর বয়স থেকে এই টিকার ৩ ডোজ। প্রথম ডোজের ১ মাস পরে দ্বিতীয় ডোজ আর ৬ মাস পরে তৃতীয় ডোজ নিতে হয়। মরণব্যাধি এই ক্যান্সারকে আমরা জয় করতে পারি শুধু আমাদের সচেতনতা দিয়ে। পারিবারিক সচেতনতা ও সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্তই পারে নারীকে এই মরণব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করতে। এক্ষেত্রে একাধিক যৌনসঙ্গী পরিহার করতে হবে। নিরাপদ যৌন সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বাল্যবিয়ে ও কম বয়সে যৌনমিলন থেকে বিরত থাকতে হবে। ধূমপান থেকে দূরে থাকতে হবে। নিয়মিত স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছেট Paptest বা Vitest করতে হবে।