জাতীয় ডেস্ক ।। অবসরের মাত্র ৭ মাস বাকি থাকতেই কেন্রদ্রে বিদেশসচিব সুজাতা সিংহকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করা হয়। আর এ ব্যাপারে তিনি আজ গণমাধ্যমে মুখ খুলেছেন। তিনি জানান, এতে তার সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, এটার কি খুব দরকার ছিল?
সুজাতার ক্ষোভ, আঠেরো মাসে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রেখেই সব কাজ করে গেছেন। বিনিময়ে সেখান থেকে পেয়েছেন নেতিবাচক মন্তব্য। তার অভিযোগ, এটা পূর্বপরিকল্পিত। দিনের পর দিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে একান্ত বৈঠকের জন্য চেষ্টা করেও সেই সুযোগ তিনি পাননি।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বক্তব্য, অন্য কোনো মাপকাঠিতে নয়, বরং কূটনীতিবিদ হিসেবে যে রেকর্ড জয়শঙ্করের রয়েছে তাতেই তিনি এ পদের অটোমেটিক চয়েস। ৩১ তারিখই তার অবসর নেয়ার কথা ছিল। তার আগেই তাকে বিদেশসচিব নিয়োগ করাটা জরুরি ছিল। সময়ের এ অঙ্ক মেলানোর চেষ্টাতেও সরতে হয়েছে সুজাতাকে।
প্রধানমন্ত্রীর দফতরের বক্তব্য, এতদিন সুজাতার কাজে কোনো সমস্যা তৈরি করা হয়নি। ব্যাকরণ মেনে তার প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখিয়ে আগে থেকে সরকারের সিদ্ধান্ত তাকে জানানো হয়েছে। বরখাস্ত করা হয়নি, বরং পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে।
দফতর থেকে আরো জানানো হয়, ২৮ বছর আগে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর সাংবাদিক বৈঠকে বসে আচমকাই বরখাস্ত করেছিলেন তখনকার বিদেশসচিব এ পি বেঙ্কটেশ্বরনকে। সেই সাংবাদিক বৈঠকে তখন খোদ সচিব উপস্থিত।
এ রকম কোনো অপমানের মধ্যে সুজাতাকে ফেলতে চাননি মোদি। আবার জয়শঙ্করের মতো দক্ষ কূটনীতিক ৩১ জানুয়ারি অবসর নিয়ে নিলে তাকে বিদেশসচিবের পদে আনার সুযোগ হাতছাড়া হতো মোদির। জয়শঙ্করকে দু’বছর আগেই বিদেশসচিব পদে চেয়েছিলেন মনমোহন। জয়শঙ্করের যোগ্যতা নিয়ে মনমোহন এতটাই আস্থাবান ছিলেন যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে গিয়ে তাকে বিদেশসচিব করতে যথাসাধ্য চেষ্টাও করেছিলেন।
কিন্তু সোনিয়ার আপত্তিতে তিনি তা পেরে ওঠেননি। এতদিন পরে যোগ্যতার মাপকাঠিতেই জয়শঙ্করকে শেষ পর্যন্ত বিদেশসচিবের আসনে বসালেন মোদি।
ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিদেশনীতিকে অগ্রাধিকার দিচ্ছেন মোদি। তার সঙ্গে জয়শঙ্করের ব্যক্তিগত রসায়নের একটি ইতিহাসও রয়েছে। ২০১২ সালে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদি যখন চীন সফরে গিয়েছিলেন জয়শঙ্কর তখন সেখানকার রাষ্ট্রদূত। সেখানে বেশ কিছ গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক আয়োজনের ক্ষেত্রে জয়শঙ্করের তৎপরতায় মুগ্ধ হন মোদি।
এক মুখ্যমন্ত্রীর জন্য বিদেশসচিবের এ সক্রিয়তা তখনই নজর কেড়েছিল মোদির। পরে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে ধীরে ধীরে তার ওপর নির্ভরতা তৈরি হয়েছে মোদির। সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রীর ওয়াশিংটন সফর এবং সদস্যসমাপ্ত প্রজাতন্ত্র দিবসে বারাক ওবামার সফরকে সফল করে তুলতে প্রবল সক্রিয় ছিলেন জয়শঙ্কর ও তার অফিস।
মনমোহন জমানার শেষ দিকে ভারত-মার্কিন সম্পর্ক তলানিতে নেমেছিল। হিমঘরে চলে যাওয়া পরমাণু চুক্তি, প্রতিরক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্কের যে অভাবনীয় উন্নতি চার মাসে দেখা যাচ্ছে জয়শঙ্করই তার অন্যতম রূপকার বলে মনে করছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর
জয়শঙ্করের দীর্ঘ ছায়ায় নিজের যাবতীয় প্রয়াস আড়ালে চলে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ সুজাতা। সেই ক্ষোভই আজ উগরে দিয়েছেন তিনি। সুজাতার কথায়, ওবামার সফরের প্রত্যেকটি খুঁটিনাটি আমরা পরিশ্রম করে তৈরি করেছি। তিনি জানান, তার মন্ত্রণালয়ের ফিসাররা করেছেন। পরমাণু চুক্তি নিয়েও যথাসাধ্য পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু সর্বদাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া গেছে
কেন এ নেতিবাচক মনোভাব? প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক অফিসারকে সুজাতা প্রশ্নও করেছিলেন এনিয়ে। সুজাতা জানান, উত্তরে তাকে বলা হয়েছিল যে, এটা ব্যক্তিগতভাবে নেয়ার কিছু নেই। সব মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেই নাকি এমনটা হয়ে থাকে। সুজাতার দাবি, আট মাসে বিদেশনীতিতে মোদি যে ঝড় তুলেছেন তার অন্যতম কান্ডারি ছিলেন তিনি।
কিন্তু নিজের ঢাক নিজে পেটান না বলে এবং ব্যক্তি নয় দলবদ্ধ কাজে বিশ্বাস করে এসেছেন বলে আজ তাকে দাম দিতে হলো।