মুখ্যমন্ত্রীর হাত ধরে পশ্চিম জেলার ৬টি বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন

আপডেট প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৩ এপ্রিল || শিক্ষার পরিকাঠামো উন্নয়নের ক্ষেত্রে আরও এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার ৬টি বিদ্যালয়ে নবনির্মিত পাকা ভবনের উদ্বোধন করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর ডাঃ মানিক সাহা। আগরতলার আমতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সরাসরি উপস্থিত থেকে তিনি এই বিদ্যালয়ের নতুন ভবনের উদ্বোধন করেন এবং ভার্চুয়াল মাধ্যমে বাকি পাঁচটি বিদ্যালয়ের উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধিত বিদ্যালয়গুলি হল—আমতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, হেনরি ডিরোজিও একাডেমি, গান্ধীগ্রাম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, তালতলা উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ইন্দ্রনগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং নন্দননগর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়গুলিতে আধুনিক পরিকাঠামোর সংযোজন শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক।
মুখ্যমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে এদিন ডাঃ সাহা বলেন, “শিক্ষা ছাড়া কোনও জাতির অগ্রগতি সম্ভব নয়। আমাদের সরকার শিক্ষা ব্যবস্থাকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে এবং যেখানে প্রয়োজন, সেখানে ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
আমতলি উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৩.৮০ কোটি টাকা। হেনরি ডিরোজিও একাডেমির দ্বিতল ভবনের নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২.৯৯ কোটি টাকা। ইন্দ্রনগর ইংলিশ মিডিয়াম বিদ্যালয়ে ১.৩৯ কোটি এবং নন্দননগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ১.৮৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। গান্ধীগ্রাম ও তালতলা বিদ্যালয়ের প্রতিটির জন্য ব্যয় হয়েছে ৮.৬৭ কোটি টাকা।
এই প্রকল্পগুলির অর্থায়ন হয়েছে স্পেশাল অ্যাসিস্ট্যান্স ফর ক্যাপিটাল ইনভেস্টমেন্ট, রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফান্ড এবং সমগ্র শিক্ষা প্রকল্পের যৌথ তহবিল থেকে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের যৌথ প্রচেষ্টাতেই এই উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, বর্তমানে রাজ্যজুড়ে ১৪০.২০ কোটি টাকার ব্যয়ে ৩০টি নতুন বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজ চলছে। পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় শুধুমাত্র সমগ্র শিক্ষার আওতায় ৩০.৫৬ কোটি টাকার ৭৩টি প্রকল্প চলমান। আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে আরও ১৬টি বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ শুরু হবে, যার সম্ভাব্য ব্যয় ১১৭.৯৬ কোটি টাকা। পরিকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে আরও ১৩ কোটি টাকা।
এই নির্মীয়মাণ বিদ্যালয় ভবনগুলোর মধ্যে পশ্চিম ত্রিপুরা জেলায় ১১টি বিদ্যালয়ের কাজ ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “শুধুমাত্র অবকাঠামো নয়, গুণগত শিক্ষা নিশ্চিত করাও সরকারের অঙ্গীকার।” প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে রাজ্য সরকার বৃত্তিমূলক শিক্ষার উপরেও গুরুত্ব দিচ্ছে।
রাণী লক্ষীবাঈ আত্মরক্ষা প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় রাজ্যের ২,০৫৮টি বিদ্যালয়ে ১ লক্ষ ৪২ হাজারের বেশি ছাত্রীকে আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্যের ৪৫৫টি বিদ্যালয়ে ১.৩১ কোটি টাকার অধিক ব্যয়ে স্থাপন করা হয়েছে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন।
তিনি বলেন, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিজ্ঞান ও ইংরেজি বিষয়ে বিশেষ কোচিং কেন্দ্র চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ডিজিটাল শিক্ষার প্রসারে রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই চালু করেছে ৮৫৪টি স্মার্ট ক্লাসরুম, ‘বন্দে ভারত’ ও ৫টি ই-বিদ্যালয় চ্যানেল। স্কুল স্তরের পাশাপাশি কলেজ স্তরেও কার্যকর হয়েছে জাতীয় শিক্ষানীতি।
এদিন এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য বিধানসভার উপাধ্যক্ষ রামপ্রসাদ পাল, শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভেল হেমেন্দ্র কুমার, বিদ্যালয় শিক্ষা অধিকর্তা এন.সি. শর্মা, ডুকলি পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান ভুলন সাহা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।
যদিও এদিন ‘QR Codes for Flora’ কর্মসূচির উদ্বোধনও হয়েছিল, দিনটির মূল তাৎপর্য ছিল শিক্ষা পরিকাঠামো উন্নয়নের নতুন দিগন্ত উন্মোচন।

FacebookTwitterGoogle+Share

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

*