আপডেট প্রতিনিধি, আগরতলা, ০৯ ফেব্রুয়ারি ৷। ২০১৮ সালের ৯ই মার্চ রাজ্যে নতুন বিজেপি-আই পি এফ টি জোট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই নতুন সরকারের তিন বছর পূর্তিকে ঐতিহাসিক রুপ দিতে মঙ্গলবার রাজধানীর স্বামী বিবেকানন্দ ময়দানে এক জনসমাবেশের আয়োজন করা হয়। এদিন এই জনসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৩ হাজার ৫১৮ কোটি টাকার ৯টি প্রকল্প উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন। জাতীয় সড়ক, মৈত্রী সেতু, ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্য, পরিকাঠামো উন্নয়নের এক দিগন্ত উন্মোচিত হয় এদিন। যা ত্রিপুরার বিকাশের যাত্রাপথে এক মাইলফলক দিন হয়ে থাকবে।এদিন ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাব্রুমে ফেনী নদীর উপর ভারত-বাংলাদেশের সংযোগকারী ১.৯ কিলোমিটার মৈত্রী সেতুর উদ্বোধন করেন। এই সেতু নির্মাণে খরচ হয়েছে ১৩৩.৮৮ কোটি টাকা। তাছাড়া এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ৯৬ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫.৩৭৮ কিলোমিটার এয়ারপোর্ট এর রাস্তাকে দুই লেন থেকে চার লেন করার প্রকল্প, ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে রাজধানীর পুরাতন মোটর স্ট্যান্ডে মাল্টি কার পার্কিং কাম কমার্শিয়াল কমপ্লেক্স, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা (শহর), স্টেট পি ডব্লিউ ডি রোড প্রকল্প, ৭৬৫.৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে আগরতলা-উদয়পুর এন এইচ-৮ প্রকল্প, ২৩২.০৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সাব্রুমে ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট, ১৩৫.৬৭ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসিটিভি এর মাধ্যমে মনিটরিং করার জন্য ইন্টিগ্রেটেড কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী বলেন, রাজ্য সরকারের তৃতীয় বর্ষ পূর্তিতে রাজ্যের জনগণ সরকারের কাজকর্মে অত্যন্ত খুশি। আর তাই আজ তাঁদের মধ্যে যে উচ্ছ্বাস আমি দেখতে পেলাম তাতে আমি আপ্লুত। মূখ্যমন্ত্রী বলেন, জনতার এই উচ্ছ্বাস আমাদের আগামী দিনে আরও উৎসাহিত করবে কাজ করতে। তিনি বুলেন,জনজাতি কল্যাণে নিরন্তর কাজ করে চলেছে সরকার। ব্রু শরণার্থীদের বিকাশের জন্য ৬০০ কোটি টাকার বিশেষ প্যাকেজ দেওয়া হয়েছে।
এদিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বলেন, মৈত্রী সেতুর ফলে সমগ্র উত্তর-পূর্ব ভারত উপকৃত হবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গেও বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি আশ্বাস দিয়েছিলাম ত্রিপুরায় হীরা দেব। আজ রেলওয়ে, এয়ারওয়ে এবং হাইওয়ের ব্যাপক উন্নতিকরণ ঘটেছে। ইন্টারনেট সংযোগ, সেতু নির্মাণ, রপ্তানির পরিকাঠামো, একের পর এক কর্মযজ্ঞ বাস্তবায়িত হচ্ছে।তিনি বলেন, আত্মিনির্ভর ভারতের নতুন কেন্দ্র হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা রয়েছে আগরতলা শহরে। সাব্রুমের ইন্টিগ্রেটেড চেক পোস্ট এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করবে। ত্রিপুরার কৃষকরা তাঁদের পণ্য আন্তর্জাতিক বাজারে বিপণন করতে পারবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে জলপথে বাণিজ্যিক সংযোগ গড়ে তোলার কাজ চলছে। যা আগামী দিনে সমগ্র উত্তর-পূর্বের বিকাশে কার্যকরী ভূমিকা নেবে। বাঁশের সামগ্রী, ধুপকাঠি-সহ অন্যান্য পণ্য বিপণনের ক্ষেত্রে বিগত দিনে যে উদ্যোগ দেখা গিয়েছে তা আরও সুসংহত হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ত্রিপুরায় তৈরি বাম্বু কুকিজের বিপণন এক প্রশংসনীয় কাজ। তিনি বলেন, হরতালের সংস্কৃতি ত্রিপুরাকে পিছিয়ে দিয়েছিল, আজ সেখানে ইজ অফ ডুয়িং বিজনেস শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার ত্রিপুরার পাশে রয়েছে। এখন আগের তুলনায় অনেক গুন বেশী অর্থ কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পাচ্ছে ত্রিপুরা।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, মৈত্রী সেতু দুই দেশের মৈত্রী বন্ধনের সাথে সাথে ব্যবসা, বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাবে। ভারত-বাংলাদেশের মৈত্রী সেতু সমগ্র নর্থ ইস্টের লাইফ লাইন হয়ে উঠবে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এখনও ভুলিনি, ১৯৭১-এর মুক্তি যুদ্ধের সময় ত্রিপুরা তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল আমাদের উদ্দেশ্যে।এদিন রাজ্য সরকারের তিন বছর পূর্তিতে ফেনি নদীর উপর মৈত্রী সেতু উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যেও উঠে এলো এই সেতু নির্মাণে রাজ্যের বিগত বামফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকারের ঐকান্তিক সদ্বিচ্ছার কথা। বললেন, ২০১০ সালে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী আমার কাছে এই ব্রিজ নির্মাণের প্রস্তাব রেখেছিলেন।
এদিনের অনুষ্ঠানে ত্রিপুরা রাজ্যের রাজ্যপাল রমেশ বৈশ, রাজ্যের উপ-মূখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেব বর্মণ, মন্ত্রীসভার অন্যান্য সদস্য-সদস্যা সহ দলীয় নেতৃত্বরা উপস্থিত ছিলেন।
