গোপাল সিং, খোয়াই, ১০ জানুয়ারী ৷৷ ‘কিন্নর’। ইতিমধ্যে যাদের মানবাধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। তারা স্বীকৃতি পেয়েছে তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে। সারা দেশেই কিন্নরদের দেখা গেলেও খোয়াই জেলায় তাদের খুব বেশী দেখা যেতনা। ভিন্ন রাজ্য থেকে জনগন এসে কিন্নরদের বিষয়ে বর্ণনা দিতেন। বিভিন্ন চলচ্চিত্রে তাদের দেখা যেত। বিগত কয়েক বছর যাবত আগরতলা শহরে এবং বর্তমানে খোয়াইয়ের গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই কিন্নরদের ব্যাপক সমাগম লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিশেষ করে বিবাহ অনুষ্ঠান, শিশুর জন্মের পর কিংবা বাজারে ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানগুলিতে আজকাল কিন্নরদের ভীড় জমাতে দেখা যাচ্ছে। প্রতিবেদকের সাথে সাক্ষাতে খোয়াই শহরের উপর ভ্রাম্যমান কিন্নরদের মধ্য থেকে দাবি আসে, সমাজের বেশীর ভাগ জনগন উনাদের ব্যাঙ্গ করেন। কু-নজরে দেখেন বা অদ্ভুত ভাবেন। গ্রামের মানুষ তাদের ভয় পান। আজ তিসা দাস নামে এক কিন্নর জানালেন উনাদের করুন কাহিনীর কথা। তিনি বলেন, জনগনের মঙ্গল কামনা করি এবং সমাজেরও। হ্যাঁ আমাদের নামে এবং অল্প কিছু সংখ্যায় আছেন যারা আমাদের কিন্নর আশ্রমের নয়। উনারা জনগনের সাথে কিছু অপ ব্যবহার করে। তার মানে এই নয় যে আমাদের পুরো সমাজটাই দায়ী। অথচ আমরা অন্য গ্রহ থেকে আসিনি। এই সমাজেই আমাদের জন্ম এবং জন্মের পর আস্তাকুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আজ তৃতীয় লিঙ্গ হিসাবে আমাদের মানবাধিকার স্বীকৃত। তারপরও আমরা আমাদের আশ্রমের দেওয়া নামে পরিচিত। আশ্রমের গুরুর ঠিকানা হল আগরতলা জিবি এলাকায়। গুরুদেব এর নাম রত্না কুর্মা দাস।
ভারত সরকার এবং রাজ্য সরকারগুলিকে দেশের শীর্ষ আদালত ঐতিহাসিক রায় দানের মধ্য দিয়ে তৃতীয় লিঙ্গের অধিকারি এই কিন্নরদের জন্য সমস্ত সরকারী সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার কথা বলা হলেও বাস্তবে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকারগুলো কিন্নরদের জন্য কিছুই করছে না। এবিষয়ে তিসা দাস জানালেন, আমরা কোনও সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছি না। আমরা বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠান বা কোন শিশুর জন্মের পর বা কোন ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠানে গিয়ে নাচ-গান করে পেট চালাচ্ছি। সবার যেমন রুটি-কপড়া-মকান এর প্রয়োজন তেমনি আমাদেরও তাই প্রয়োজন। তারপরও আমরা সমাজে অবহেলিত। অথচ আমরাও এই দেশের নাগরিক। সমাজের সন্তান। সরকার ইচ্ছে করলেই আমাদের বিভিন্ন জায়গায় নিয়োগ করতে পারেন। সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে যেকোন কাজে লাগাতে পারে। যেহেতু আমাদের কোন পরিবার নেই সুতরাং আমরা কাজে-কর্মে একশ শতাংশ পরিসেবা দিতে সক্ষম। অথচ স্বাধীনতার ৭০ বছর পরও আমাদের দেশে ৮-১০ জনের বেশী প্রতিষ্ঠিত হতে পারেনি। তাই আমাদের আবেদন সমাজ এবং সরকার যেন আমাদের কিন্নর সমাজের প্রতি সুনজর দিয়ে আমাদের রক্ষা করে। আমরা একই সমাজে জন্মগ্রহন করেছি। আমরা গান গাই, নৃত্য করি সবই পেটের তাগিদে। আমাদের দিকে যেন সমাজ একটু অন্য ভাবনা নিয়ে চিন্তা করে এটাই আমাদের আবেদন।
তিন বছর আগে কিন্নরদের পক্ষে ভারতের ন্যাশনাল লিগাল সার্ভিস অথরিটির করা জনস্বার্থ মামলায় সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে তৃতীয় লিঙ্গের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিল, তা ছিল অভূতপূর্ব। কিন্তু আদালতের বাইরে বৃহত্তর ভারতীয় সমাজও এখন কিন্নরদের প্রতি সেই উদারতা ও সহিষ্ণুতার পরিচয় দিতে পারেনি। বিশেষ করে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের সুযোগ-সুবিধাগুলি এখনও কিন্নরদের কাছে পৌছুতে পারেনি। তাইতো তিসার মতো ১৫-১৬ জনের একটি দল পেটের তাগিদে খোয়াই শহরের আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দেশের আইন তাদের স্বীকৃতি দিলেও সমাজ ও সরকার তাদের এই স্বীকৃতিকে কবে নাগাদ গ্রাহ্য করবে, এখন সেটাই দেখার।